দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পেঁয়াজ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড চলছে গত এক মাস যাবত। ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম উঠেছিলো প্রায় তিন শত টাকা। যদিও গত দুদিন হলো আবার ১৩০ বা ১৫০ টাকার মধ্যে আবার নেমে এসেছে। এবার বিকল্প ভাবনা হিসেবে আসছে পেঁয়াজের বিকল্প ‘চিভ’!
পেঁয়াজের দাম যখন লাগামহীন অবস্থায় উপনিত হয়েছে ঠিক তখন বিকল্প হিসেবে চিভ নামে এক ধরনের মসলার জাত চাষে সাফল্য আনতে চলেছেন গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ইতিমধ্যেই গবেষকদের উদ্ভাবিত এই মসলা জাতীয় ফসল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এটি সারাবছরই চাষাবাদ করা যাবে। এতে পেঁয়াজের ওপর চাপ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহম্মদ শহীদুজ্জামান সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, চিভের স্বাদ অনেকটা পেঁয়াজের মতোই। কিন্তু এটিতে পেঁয়াজের মতো গুটি কিংবা দানা হয় না।
এই চিভ শুধু পাতা জাতীয় ফসল। মাটির ওপরের অংশই কেবলমাত্র খাওয়া যায়। এর চারা লাগানোর ৬৫ হতে ৭০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যাবে। এটি বছরে ৪/৫ বার উত্তোলন করা সম্ভব। এটির পাতা, কাণ্ড এবং ফুল মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ইতিমধ্যেই এই মসলার চাষযোগ্য উচ্চ ফলনশীল জাত বারি চিভ-১ অবমুক্ত করা হয়েছে।
মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অপর একজন বিজ্ঞানী ড. রুম্মান আরা জানিয়েছেন, তিনি নিজে চিভ তরকারিতে ব্যবহারও করেছেন। স্বাদ ও গন্ধ অনেকটা পেঁয়াজ এবং রসুনের মতোই। স্যুপ, সালাদ, তরকারি এবং চাইনিজ ভিজিটেবল আইটেমে এটি ব্যবহার করা যাবে।
কেন্দ্রের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, মসলাটি বর্তমানে সম্প্রসারণ পর্যায়ে রয়েছে। এটি খুবই সহজে ও তুলনামূলক কম খরচে চাষাবাদ যোগ্য। একবার পাতা-কাণ্ড কেটে নিলে আবারও গজায়। বাড়ির আঙিনা কিংবা টবে চাষ করা সম্ভব। দেশের সব অঞ্চলেই এর চাষাবাদ সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে চিভ ২০১৭ সালে অবমুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞানী ড. রুম্মান আরা আরও বলেছেন, এটি ব্যবহার করে পেঁয়াজের চাহিদা অনেকটা মেটানো সম্ভব।
এই চিভের গুণাগুণ সম্পর্কে গবেষকদের অপর একজন ড. আজাদ জানিয়েছেন, এটি হজমে সাহায্য ও বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাগুণ। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, নায়াসিন, ক্যারোটিন এবং খনিজ উপাদানও। এই চিভের পাতা লিনিয়ার আকৃতির, ফ্লাট, কিনারা মসৃণ, বাল্ব লম্বাটে ধরনের। এটি সাধারণত সাইবেরিয়া-মঙ্গোলিয়া এবং নর্থ-চায়না অঞ্চলে উৎপাদিত হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
যেহেতু আমাদের দেশে প্রতিবছরই পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা যায় এবং চাহিদা পূরণ করার জন্য বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা লাগে তাই এই চিভ পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃষক পর্যায়ে এটি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।