দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একের পর এক নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে অস্ট্রেলিয়া। ভয়াবহ দাবনল হতে উঠে আসতে না আসতেই দেশটি ইতিমধ্যেই এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। এর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল।
বিবিসি ও এবিসি নিউজ এর এক খবরে বলা হয়, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ১২টিরও বেশি দাবানলের খবর পাওয়া গেছে বলে জানায় বুরো অব মেটিরিয়োলজি। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি জেলার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই দাবানল-সতর্কতা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ হতে।
গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ড্যামিয়ান। যদিও বড়সড় ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। আছড়ে পড়ার পর ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারালেও তীব্র ঝড়ো হাওয়া সমস্যা বাড়িয়েছে দেশটির সাধারণ বাসিন্দাদের। সঙ্গে রয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাতও।
অপরদিকে গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রায় বিরামহীন প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের সিডনি এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের বিভিন্ন এলাকাতে। যার কারণে বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
প্রশাসন সূত্রে খবর হলো, ১৯৯৮ সালের পর বৃষ্টিপাতের জেরে এমন পরিস্থিতি এই প্রথম দেখতে পাইছে অস্ট্রেলিয়া। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে প্রাণহানির আশঙ্কাও তৈরি হবে।
বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে দেশটির কুইন্সল্যান্ডেও। গত রবিবার এই সতর্কবার্তা জারি করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। শনিবার রাত হতে লাগাতার বৃষ্টি চলেছে কুইন্সল্যান্ডে। ব্রিসবেনের ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে বৃষ্টির কারণে একটি খাঁড়ি উপচে পড়ার কারণে ড্যালবির বাসিন্দাদের জন্যও বন্যা সতর্কতা জারি করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
গত সপ্তাহে সিডনিতে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়। এতে ওই এলাকায় কয়েক মাস ধরে চলা দাবানলের আগুন প্রায় নিভেই গেছে। এছাড়াও প্রবল বর্ষণে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জনবসতিপূর্ণ রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের জলাধারগুলোও আবার ভরে উঠেছে। সিডনি এবং এর আশপাশের এলাকায় প্রায় ৪শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওয়ারাগাম্বা বাঁধে পানির পরিমাণ ৪০ শতাংশ থেকে একলাফে বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। সিডনি শহরের প্রায় ৫ ভাগের চারভাগ পানিই এই বাঁধ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও ক্রমাগত পানিবৃদ্ধির কারণে বন্যা ও ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস ফায়ার সার্ভিসের সিডনি সদর দফতর। গত সেপ্টেম্বর হতে দাবানলে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া। এতে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ওই সময়ের মধ্যে মারা গেছে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণি। দাবানলের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে লাখ লাখ একর জমির গাছপালা। গরমের মৌসুম হওয়ায় দাবানলের আগুন নেভাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় দেশটির দমকলকর্মীদের। তাদের জন্য একপ্রকার আশীর্বাদ হয়েই যেনো শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ!
অপরদিকে গত তিন বছর ধরে খরা ও ধূলিঝড়ে ভুগছিল দেশটির দুব্বো অঞ্চল। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, পানি ব্যবহারেও বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয় শহর কর্তৃপক্ষকে। এবার শুষ্ক-রুক্ষ এই শহরেও নেমেছে বৃষ্টির জলধারা। প্রবল বৃষ্টিপাতে দাবানল গেলেও সিডনির বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে অন্তত ১০ হাজার বাড়িঘর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়েছে। এক সপ্তাহের জন্য সেখানকার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে অন্যত্র ছুটছেন।