দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খাগড়াছড়িতে বেড়াতে গেলে ঘুরে আসতে পারেন পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির। প্রাকৃতিক অরণ্যের এই স্থানটি আপনার হৃদয় কেড়ে নেবে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর হিসেবে খ্যাত খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির গভীর অরণ্যে প্রায় ৬৫ একর জায়গা জুড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান শান্তিপুর অরণ্য কুঠির অবস্থিত। নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ভিক্ষুদের ধ্যান করার সুবিধার্থে এখানে ১৯৯৯ সালে অধ্যক্ষ ভান্তে ভদন্ত শাসনরক্ষিত মহাথেরো এই কুঠির স্থাপন করেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তিই হলো এই শান্তিপুর অরণ্য অরণ্য কুঠিরের প্রধান আকর্ষণ। ৫০ ফুট বিশিষ্ট নান্দনিক এই বৌদ্ধ মূর্তি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় ৪ বছরের মতো। ছোট ছোট টিলা এবং পাহাড়ি গাছ-গাছালি দিয়ে ঘেরা এই কুঠিরে রয়েছে সুবিশাল মাঠ, দুইটি কৃত্রিম হ্রদ, অনুষ্ঠান মঞ্চ, ছোট্ট বেড়ার ঘর ও রয়েছে ভক্তদের উপাসনার বাতিঘর।
কুঠিরের চারপাশে লাগানো রয়েছে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ বন এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করে চলেছে। শান্তিপুর অরণ্য কুঠিরের অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে সুসজ্জিত প্রার্থনার স্থান, মারবিজয়ী উপগুপ্ত মহাস্থবিরের মূর্তি, লাভীশ্রেষ্ঠ সিবলী মহাস্থবিরের মন্দিরসহ মূর্তি, ১০০ হাত দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ভিক্ষু শালা, ৮০ হাত দৈর্ঘ্যের ভোজনালয়, ৬০ হাত দৈর্ঘ্যের দেশনাঘর, অধ্যক্ষ ভিক্ষুর আবাসস্থল মৈত্রী ভবন, সুদৃশ্য শ্রামনশালা। কুঠিরের প্রতিটি ভাস্কর্যে গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশার বিভিন্ন কাহিনী, উপদেশ এবং অনুপ্রেরণামূলক বাণীও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও এখানে ২৫টিরও বেশি সাধনা কুঠির এবং উপ কুঠির। প্রত্যেকটি কুঠিরে একজন করে ভিক্ষু ও শ্রামন ধ্যানে মগ্ন থাকেন। বড় মূর্তির পিছনের দিকে ১৩টি কুঠিরে ভান্তেরা সাধনা করেন তাই সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। ধর্মীয় আচার পালনের সুবিধার্থে সকাল ১১টা হতে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া রয়েছে।
হিংসা-বিদ্বেষহীন এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি পানছড়ির শান্তি, সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা করে চলেছে। প্রতি বছর বৌদ্ধ পূর্ণিমা, আষাঢ়ি এবং প্রবারণা পূর্ণিমাতে এখানে বৌদ্ধ পূজা এবং উৎসবের আয়োজন করা হয়। কঠিন চীবর দানের সময় দেশের নানা স্থান হতে ৫০ হাজারেরও অধিক ভক্ত ও পূন্যার্থীর আগমন ঘটে এই পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠিরটিতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে প্রতিদিন এখানে শতাধিক পূণ্যার্থী এবং পর্যটকদের আগমন ঘটে।
যাবেন কিভাবে
রাজধানী ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, উত্তরা কিংবা আরামবাগ হতে সেন্ট মার্টিন হুন্দাই, শান্তি, শ্যামলী, হানিফ, ইকোনো, রিলেক্স ও ঈগল পরিবহনে খাগড়াছড়ি যাওয়া যাবে। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৮৫০ হতে ১২০০ টাকার মধ্যে। খাগড়াছড়ি হতে শান্তিপুর অরণ্য কুঠিরের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারের মতো। খাগড়াছড়ি জেলা শহর বাসে পানছড়ি এসে জীপ কিংবা মাহেন্দ্র গাড়ী ভাড়া নিয়ে পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির যাওয়া যাবে।
থাকবেন কোথায়
খাগড়াছড়িতে থাকার জন্য পর্যটন মোটেল, হোটেল ইকো ছড়ি ইন, হোটেল হিল টাচ, শৈল সুবর্ন, হোটেল নূর, হোটেল মাউন্ট ইন, গাংচিল আবাসিক এবং অরণ্য বিলাস সহ বেশকিছু আবাসিক হোটেলে আপনি রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
খাবেন কোথায়
পানছড়িতে বেশ কয়েকটি খাবারের হোটেল রয়েছে, এদের মধ্যে হোটেল পারভেজ, ট্রাইভাল রেস্টুরেন্ট, নিরব রেস্টুরেন্ট, লেক ভিউ উল্লেখযোগ্য খাবার হোটেল। এছাড়াও খাগড়াছড়ি শহরের মধ্যে শাপলা চত্বর, বাস স্ট্যান্ড ও পান্থাই পাড়ায় আরও কিছু ভালো খাবারের রেস্টুরেন্ট পাবেন। খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরাঁ, গাং সাবারং, পেডা টিং টিং, পাজন এবং চিম্বাল রেস্টুরেন্ট বেশ জনপ্রিয়।
খাগড়াছড়ির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
খাগড়াছড়ির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আলুটিলা গুহা, রিসাং ঝর্ণা, হাতিমাথা এবং নিউজিল্যান্ড পাড়া উল্লেখযোগ্য স্থান। আপনি ইচ্ছে করলে এইসব স্থানে ঘুরে আসতে পারেন।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com