দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশসহ বিশ্বে শুরু হয়েছে এক করোনা বিপর্যস্ত। বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অপর দিকে মৃতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে একদিনে ৯ ঘণ্টার পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৫০ জন আক্রান্ত ও ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
প্রাণঘাতী এই করোনা নিয়ে সবার এখন একটাই প্রশ্ন আর তা হলো- করোনা শেষ হতে আর কতোদিন সময় লাগবে? মানুষ কবে নাগাদ তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে ফিরতে পারবেন?
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, মাত্র ১২ সপ্তাহের মধ্যে করোনার ঢেউ উল্টোপথে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবে ব্রিটেন। এর মধ্যে মোটে দেড় সপ্তাহ পার হয়েছে এ পর্যন্ত।
তবে ৩ মাসের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমে আসবে। তবে করোনার সংক্রমণ পুরোপুরি শেষ হতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময লাগতে পারে।
তবে এখন করোনা হতে বেরিয়ে আসার কৌশল আসলে কী হবে? সেই বিষয়ে এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশেরই কৌশল নেই। এই কৌশল ঠিক করা বড় ধরনের বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ বটে।
তবে তিনি ৩টি উপায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। একটি হলো টিকা দেয়া। দ্বিতীয়টি হলো বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে তাদের মধ্যে এই নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। তৃতীয়ত স্থায়ীভাবে মানুষ ও সমাজের আচার-আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।
এদিকে টিকা আসতে সময় লাগবে ১২ হতে ১৮ মাস। এই টিকা গ্রহণ করলে করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলেও তারা অসুস্থ হবেন না। যতো বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে ততোই ভালো। যদি মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়, তাহলে এই ভাইরাস আর ছড়িয়ে পড়বে না।
ইতিমধ্যেই আমেরিকায় এক ব্যক্তির দেহে পরীক্ষামূলকভাবে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে এই টিকা সফল হবে কিনা বা বিশ্বজুড়ে এই টিকা দেওয়া যাবে কি না সেই বিষয়টির নিশ্চয়তা নেই।
করোনা সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য ব্রিটেন আক্রান্তের সংখ্যা যতোটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। যেনো হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ না হয়।
ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্সি বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কখন কোন পর্যায়ে যাবে সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া সম্ভব নয়।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেন, আমরা সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছি। যেনো মানুষ কম আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, যদি দুই বছরের বেশি সময় যাবত এটা করতে পারি তাহলে দেশের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবেন। যে কারণে স্বাভাবিক নিয়মে রোগ প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
এদিকে প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস এপ্রিল মাসের শেষ দিকে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে মনে করছেন চীনের শ্বাসতন্ত্রের রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জুং নানশান। চীনের শেনজেন টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
জুং নানশান বলেন, করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের দেশগুলো যেভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে আমার মনে হচ্ছে যে এই মাসের শেষদিকে মহামারিটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে। তবে আগামী বসন্তে আরও একটি ভাইরাস দেখা দেবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।