দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বব্যাপি মহামারীতে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় হিমসিম খাচ্ছে পুরো বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অতিরিক্ত চাপ পড়ছে চিকিৎসক-নার্সদের ওপর।
নিজেদের সঠিক নিরাপত্তা না থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা পলিথিন দিয়ে পিপিই বানিয়েই চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) চাহিদার তুলনায় কম থাকার কারণে দেশটির চিকিৎসকরা পলিথিন পরেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশটিতে আইসিইউ পরিসর বাড়াচ্ছে সরকার। তবে তাদের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি কম থাকার কারণে নিজেদের বাঁচাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে যুক্তরাজ্যের এক চিকিৎসক সংবাদ মাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, দেশটিতে খাদের কিনারায় থাকা একটি হাসপাতালের আইসিইউ কোভিড-১৯ রোগীতে পরিপূর্ণ রয়েছে। ওই হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যকর্মী, রোগীর বিছানা, সাধারণ এন্টিবায়োটিক ও ভেন্টিলেটরের অভাবও রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে যে, যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাস ১৪-১৫ এপ্রিলের মধ্যে বড় আঘাত হানতে পারে। বিশ্লেষকদের ভাষায় যেটাকে বলা হয়েছে ‘পিক টাইম’।
খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেওয়া সরঞ্জামের অভাব প্রকট, এমনও হয়েছে যে পিপিইর অভাবে ময়লা ফেলার পলিথিন, প্লাস্টিকের অ্যাপ্রোন এবং স্কিইং করার চশমা পরে তারা কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন এমন ব্যক্তির হতে ২০ সেন্টিমিটারের মতো দূরত্বে থেকে কাজ করছেন চিকিৎসকরা; যেখানে সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে ন্যূনতম দূরত্ব ২ মিটার হতে হবে।
বিবিসিকে দে য়া সাক্ষাৎকারে ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে তাদের জীবনে সেটা এখনই তাদেরকে ভাবাচ্ছে। তারা এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে নিজেদের পিপিই নিজেরাই তৈরি করছেন।
তিনি বলেন, এটা আসলে বাস্তব চিন্তা, নিবিড় চিকিৎসা যে সব নার্স দিচ্ছেন তাদের এটি এখনই প্রয়োজন। তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে ভাইরাস অ্যারোসলের মতো করে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে খুব সাধারণ টুপি পরতে যেটায় ছিদ্র রয়েছে। যেটা আদতে কোনো সুরক্ষাই দিচ্ছে না।
এটা প্রচণ্ড রকমের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। তাই কর্মীরা বিনের ব্যাগ ও অ্যাপ্রোণ পরেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ১ এপ্রিল ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছে বলে জানিয়েছে এনএইচএস। তবে সেখানে মাথার সুরক্ষা এবং গাউনের কথা বলাই হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পূর্ব লন্ডনের হেলথ কেয়ার সহকারী থমাস হারভে, সেন্ট্রাল লন্ডনের প্রফেসর মোহাম্মদ সামি সৌশা, দক্ষিণের ড. হাবিব জাইদি, পশ্চিম লন্ডনের ড. আদিল এল তাইয়ার ও লেস্টারের ড. আমজেদ এল হাওরানি মারা গিয়েছেন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।