দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ লকডাউন থাকলেও পেটের টানে অনেকেই বাধ্য হয়ে এক-আধ ঘণ্টার জন্য বাড়ির বাইরে বেরুতে ও বাজারে যেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হয়তো আপনার পাশেই দাঁড়িয়ে বাজার করছেন একজন করোনা আক্রান্ত! আপনি জানবেন কীভাবে? এবার মোবাইল অ্যাপ তা জানিয়ে দেবে!
বাজারে গিয়ে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। আপনি তো জানেনই না, হয়তো ওই ব্যক্তিও হয়তো জানেন না, পরীক্ষা করানো হয়নি বলে। এই অবস্থায় ভাইরাসের সংক্রমণ আপনার শরীরে ও আপনার থেকে আপনার পরিবারের কারও শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে! এ ভাবেই লকডাউনেও ছড়িয়ে পড়তে পারে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস।
তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন ইজরায়েলের একদল বিজ্ঞানী। অজান্তে অন্য কারও শরীর হতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ওই দেশটি কাজে লাগাচ্ছে একটি স্মার্টফোন অ্যাপ। এই অ্যাপ যে কেও তার মোবাইলে ইনস্টল করে রাখতে পারেন।
এই অ্যাপ মোবাইলে ইনস্টল করার পর সেটি সঙ্গে করে বাইরে বেরুলেও ‘অজান্তে’ শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ হলো, যার স্মার্টফোনে এই অ্যাপ থাকবে, তার ধারে-কাছে কোনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি এলেই শব্দ করে সংকেত দেবে এই মোবাইল অ্যাপটি। যে কারণে যার স্মার্টফোনে এই অ্যাপ রয়েছে, তিনি সতর্ক হয়ে যাবেন যে তার আশেপাশেই করোনা আক্রান্ত কেও ঘোরাফেরা করছে। এরপরই এই অ্যাপ তাকে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ারও নির্দেশ দেবে।
এই বিশেষ অ্যাপের সাহায্যে প্রশাসনের কাছেও এলাকা চিহ্নিত করে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। যে কারণে কোয়ারেন্টাইন বা চিকিৎসা- দুইয়েরই ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে প্রশাসনের পক্ষ হতে।
গত ১৪ মার্চ ইজরায়েল সরকার ‘ট্র্যাক ভাইরাস’ নামে একটি অ্যাপ সকলের সামনে আনে, যেটির সাহায্যে সংক্রমিত ব্যক্তিদের অবস্থানও দেখা যাবে। অ্যাপটি ‘ইনস্টল’ করার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন ব্যবহারকারীর গতিবিধির উপরে নজর রাখতে পারবে ইজরায়েল সরকারের প্রশাসন। ১৭ মার্চ হতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারও করা হচ্ছে ইজরায়েলে। ‘ট্র্যাক ভাইরাস’ অ্যাপের সাহায্যে এক দিনে ৪০০ জনকে কোয়রান্টিন করা হয়েছে দেশটিতে। এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদীদের উপর নজরদারীও চালাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচররাও এই প্রযুক্তির সাহায্যেই একাধিক গোপন ডেরার সন্ধান পৌঁছে দেন তাদের মূখ্য কার্যালয়গুলোতে।
ইজরায়েলে এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ২৩৫, এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ১১০ জনের। এই অ্যাপের সাহায্যে আগে ভাগেই করোনা আক্রান্তকে শনাক্ত করতে পারছে দেশটির প্রশাসন ও স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। যে কারণে দ্রুত শুরু করে দেওয়া যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা। তাই আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু হার দেশটিতে অনেকটাই কম।
তবে শুধু ইজরায়েলেই নয়, ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে Apple, Google-এর মতো সংস্থাও অ্যাপ তৈরি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ভারতেও লঞ্চ হয়েছে AarogyaSetu নামে মোবাইল অ্যাপ। তাই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই শুরু হয়েছে মোবাইল অ্যাপ-নির্ভর ভাইরাস শনাক্তকরণের নানা কর্মসূচি। সবাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে করে এই প্রাণঘাতি ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।