দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতি করোনার প্রকোপ না কমতেই চীনে এবার দেখা দিয়েছে ‘বিউবোনিক প্লেগ’ রোগ। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এই রোগ মহামারির আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
গত নভেম্বরে ইনার মঙ্গোলিয়ায় ৪ জনের শরীরে প্লেগ দেখা যায়। এদের মধ্যে আবার ২ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন বেশি বিপজ্জনক নিউমোনিক প্লেগে। প্লেগ দেখা দেওয়ায় রবিবার জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে চীন সরকার।
বিউবোনিক প্লেগ আসলে কী?
বিউবোনিক প্লেগকে মূলত মধ্য যুগে বলা হতো ব্ল্যাক ডেথ। অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই রোগ মূলত ইঁদুর, কাঠবেড়ালি জাতীয় প্রাণী হতে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত মাছি কামড়ালেও এই রোগ হতে পারে। এই রোগের মাধ্যমে প্লেগ ব্যাসিলাস, ওয়াই পেসটিস শরীরে ঢুকে যায় এবং লসিকা নালী দিয়ে বাহিত হয়ে সোজা চলে যায় লসিকা গ্রন্থিতে, সেখানে এটি নিজের ক্লোন তৈরি করে। লসিকা গ্রন্থি তখন ফুলে ওঠে, আর শুরু হয় ব্যথা। এর নাম হলো বিউবো। এই রোগের অ্যাডভান্সড স্টেজে লসিকায় এক ধরনের ঘা হয়ে যায়, তখন ভরে যায় পুঁজে। তবে মানুষ থেকে মানুষে এই রোগের সংক্রমণ বিশেষ একটা দেখা যায় না। ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে পৌঁছালে বিউবোনিক প্লেগ নিউমোনিক প্লেগের চেহারাও নিতে পারে।
জানা গেছে যে, প্লেগের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো এই নিউমোনিক প্লেগ। কাশির মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে যায়। বিউবোনিক প্লেগে মৃত্যুর হার ৩০ হতে ৬০ শতাংশ। তবে নিউমোনিক প্লেগের এখনও কোনও রকম চিকিৎসা নেই। তাই সেটি সব থেকে ভয়াবহ। তবে বলা হয়েছে যে, ঠিক সময় ধরা পড়লে বিউবোনিক এবং নিউমোনিক- দুই ধরনের প্লেগ থেকেই পুরোপুরিভাবে সেরে ওঠা সম্ভব।
বলা হয়েছে, সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক এই প্লেগ সারাতে পারে। তবে রোগ দেখা দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা দিতে হবে। কারণ এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। নিউমোনিক প্লেগ দেখা দিলে ওই রোগীকে অবশ্যই আইসোলেশনে রাখতে হবে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের তার কাছাকাছি আসতে হবে করোনার মতোই পিপিই পরে।
এর লক্ষণ কেমন?
আচমকা ধুম জ্বর উঠে যাওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ। মাথায় এবং গোটা শরীরেও যন্ত্রণা হতে পারে, খুব দুর্বলতা থাকতে পারে। বমিও হতে পারে, থাকতে পারে বমি বমি ভাবও। এছাড়াও লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে, শুরু হতে পারে ব্যথাও।
জানা গেছে যে, এই নিউমোনিক প্লেগের লক্ষণ খুব দ্রুত দেখা দেয়। এমনকী সংক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। শ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা শুরু হয়ে যায়, দম নিতে খুব কষ্ট হয়, দেখা দেয় কাশিও। থুতুতে রক্তও উঠতে পারে। মৃতদেহ থেকেও ছড়াতে পারে প্লেগ রোগ। যারা দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করবেন তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মৃতদেহের তরলে তখনো অবস্থিত ব্যাকটোরিয়া ছড়াতে পারে এই রোগ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, চতুর্দশ শতকে ইউরোপের অন্তত এক তৃতীয়াংশ মানুষের এই ব্ল্যাক ডেথ কিংবা বিউবোনিক প্লেগে প্রাণ চলে যায়। এই রোগ অন্তত পক্ষে তিনবার মহামারির আকার নিয়েছে, মারা গেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই বিউবোনিক প্লেগের জন্মও দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউনানে! ইউনান হতে আফিম কারবারীদের মাধ্যমে ১৮৯৪ সালে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বে। আর তখনই শুরু হয় তৃতীয় প্লেগ মহামারি। তবে তারপর হতে বিউবোনিক প্লেগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসতে থাকে। তবে আবারও এই আমলে এসেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০১০ হতে ২০১৫-র মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ৩,২৪৮ জন গোটা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত হন, মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮৪। মৃত্যুর হার ছিলো ১৮ শতাংশ।
তথ্যসূত্র : deshebideshe.com
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।