দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বসবাসের অযোগ্য এক নরকে পরিণত হচ্ছে বিশ্ব? এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং জাতিসংঘ। তারা বলছে, বিশ্ব এখন রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের ব্যর্থতার কারণে নরকে রূপান্তরিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির দাবি, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে গত ২০ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে।
সিএনএনএর এক খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মতে, মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও মৃত্যু এবং অসুস্থতার হার ঠেকাতে বিশ্বের প্রায় সব দেশই ব্যর্থ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সে কারণে বিশ্বে ১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু এবং অন্তত ৩৭ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্তও হয়েছেন।
এই বিষয়ে সংস্থাটির মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জলবায়ু বিপর্যয় এবং পরিবেশের অবক্ষয় হ্রাস করার ক্ষেত্রে আমরা খুব কমই অগ্রগতি দেখেছি। দারিদ্র্য দূরীকরণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করতে আমাদের অবশ্যই বাকি সবকিছুর চেয়ে জনগণের কল্যাণকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
জাতিসংঘের ইউএনডিআরআর- এর এক তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী ২০০০ হতে ২০১৯ সালের মধ্যে ভূমিকম্প, সুনামি এবং ঘূর্ণিঝড়সহ ৭ হাজার ৩৪৮টি বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে ১ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু, ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতিও হয়েছে।
ইউএনডিআরআরের প্রধান মামি মিজুতোরি এবং বেলজিয়ামের সিআরইডির দেবরাতি গুহ-সাপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা স্বেচ্ছায় এবং জেনে-শুনেই নিজেদের ধ্বংসের বীজ বপন করে চলেছি। সুশাসনের মধ্যদিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও হ্রাস করা সম্ভব।
এদিকে জাতিসংঘের দ্য হিউম্যান কস্ট অব ডিজাস্টার শীর্ষক নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই সংখ্যাটি ১৯৮০ সাল হতে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ৪ হাজার ২১২টির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ হিসেবে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হয়। বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে গত ২০ বছরে বন্যা, ঝড়, হিটওয়েভ, খরা, হ্যারিকেন এবং দাবানল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
জলবায়ু বিপর্যয়ের গত ২০ বছরে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এশিয়া মহাদেশ। এই অঞ্চলটি ২০০০ সাল হতে ২০১৯ সালের মধ্যে ৩ হাজার ৬৮টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিলো। এছাড়াও আমেরিকায় ১ হাজার ৭৫৬ ও আফ্রিকাতে ১ হাজার ১৯২টি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে গত দুই দশকে ৫০০টিরও বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকাতে সকলের উপরে রয়েছে চীন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ৪৬৭টি দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, আগাম সতর্কবার্তার জন্য দুর্বল সম্প্রদায়গুলো রক্ষায় কিছু সাফল্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোতে দুর্যোগে সাড়াদানকারী সংস্থাগুলো ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার ক্ষেত্রে ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে অনেক প্রাণও বাঁচিয়েছে। তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন যে, সম্প্রদায়গুলোতে প্রতিকূলতার মাত্রা অব্যাহত রয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।