দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাসা থেকে পালিয়ে ১৫ দিন নিখোঁজ ছিল ঐশী। উঠেছিল রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বয়ফ্রেন্ডের ভাড়া করা বাসায়। রিমাণ্ডে এসে এমন কথায় বলেছে পুলিশকে। অপরদিকে ঐশীর বন্ধু জনি ও সাইদুলকে নিয়ে এখনও রহস্য কাটেনি।
অবাধ মেলামেশা ও মাদক সেবনের পরিবেশ খুঁজতেই সে পরিবার ছেড়েছিল। রমজানের আগে সেখান থেকে তাকে বাসায় ফিরিয়ে আনার পর তার বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেন ঐশীর বাবা-মা।
গতকাল জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামিদের জীবন-যাপনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে শুরু করে অক্সফোর্ড ও ব্রিটিশ কাউন্সিলে রেজিস্ট্রেশনকালীন ঐশীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বেশির ভাগ ঘনিষ্ঠজনদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঐশীর তিন বছরের চাল-চলন। সে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে অধ্যয়নকালে ৮ম শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। ফলে ৯ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এরপর ২০১০ সালের ৯ই জুন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থী হিসেবে ৮ম শ্রেণীতেই ভর্তি হয়। সেখানে ভর্তির কয়েক দিনের মাথায় অক্সফোর্ডের ইয়াবা সেবনকারী গ্রুপের সদস্য বাকিরের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। ধীরে ধীরে বাড়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। এই বাকিরের মাধ্যমেই ইয়াবা সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ে ঐশী। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। যতই দিন যায় ততই নেশার টান বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে সঙ্গী (বয়ফ্রেন্ড) বদলের প্রবণতা। বছর না ঘুরতেই বাকিরের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলে। যুক্ত হয় ইয়াবা সেবনকারী সার্কেলে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে হারিয়ে যায় নেশার জগতে। মধ্যরাত পর্যন্ত আড্ডা ও পার্টির নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে। একই সঙ্গে ইয়াবা সেবনকারী আরও কয়েকজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
২০১২ সালে অক্সফোর্ডের আরেক বয়ফ্রেন্ডের মাধ্যমে পরিচয় হয় জনির সঙ্গে। জনি পড়াশোনা না করলেও বিভিন্ন পার্টিতে ড্যান্সার হিসেবে ভাড়া খাটতো। তার ড্যান্সের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে ঐশী। পাশাপাশি ইয়াবা সরবরাহকারী মিজানুর রহমান রনির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। গোয়েন্দারা জানান, রনি মূলত গাঁজা ও ইয়াবার খুচরা ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ ইন্সপেক্টরের কন্যা হিসেবে ঐশীকে টার্গেট করেছিল ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। ইয়াবার চালান সরবরাহে তার প্রভাব কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি ডিজে ও ড্যান্সার গ্রুপের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিল। এসব গ্রুপের কাছ থেকে মাঝে-মধ্যেই মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন শুরু করেছিল ঐশী। এ কারণে তার মা স্বপ্না রহমান মেয়ের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ করেছিলেন। মধ্যরাতে বাসায় ফেরা ও তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দেখে প্রশ্ন করেছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানায়, রমজান মাসের কয়েকদিন আগে রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরলে তার মা বেশ্যা বলে গালাগাল দেন। বলেন, ‘এত রাত পর্যন্ত তুই কার কাছে শুয়েছিলি তোর কাছে টাকা আসে কিভাবে তুই একটা বেশ্যা। দেহ খাটিয়ে টাকা কামাই করছিস।’ ঐশী জানায়, মায়ের কাছ থেকে এমন গালাগাল শোনার পর বাসা থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নিই। পরের দিন কাওকে না বলে রাজধানীর একটি ভাড়া বাসায় উঠি। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রমজান মাসের শুরুতে ঐশী বাসা থেকে পালিয়ে বয়ফ্রেন্ড জনির আশ্রয়ে থাকে। ঐশীর সঙ্গে সম্পর্কের পাশাপাশি জনি মেরুল বাড্ডায় আইরিন নামে আরও এক তরুণীর সঙ্গে লিভ টুগেদার করতো। সেই সুবাদে আইরিনের দুই রুমের ভাড়া বাসার একটি রুমে ঐশী থাকতে শুরু করে। সেখানে মাদক গ্রহণ ও জমিয়ে আড্ডা দেয়া হয়। বেড়ে যায় বয়ফ্রেন্ডদের যাতায়াত। এদিকে ঐশীর বাবা মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালিয়ে রমজান মাসে মেয়েকে ওই বাসা থেকে নিয়ে আসেন। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ঐশী দাবি করেছে, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বাইরে বের হওয়ার শর্ত দিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বাসায় আনার পর তার মা তাকে প্রায় বন্দি করে রাখেন। এরপরই সে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। গোয়েন্দারা জানান, ঐশী একাধিকবার আত্মহত্যার কথা চিন্তা করেছিল। পরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় নিজের পিতা-মাতাকেই হত্যা করেছে।
জনি ও সাইদুলকে ঘিরে রহস্য বাড়ছে
জনি ও সাইদুলকে ঘিরেই এখন রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। গোয়েন্দারা বলছেন, এই দু’জনকে পাওয়া গেলে সব রহস্য উন্মোচন হবে। ঐশীর পলাতক দুই বন্ধুর বাড়ি বাসাবো ও মান্ডা এলাকায়। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কারণ ও জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু দুই বন্ধুর বিষয়টি সামনে রয়েছে। এই দুই বন্ধু সাইদুল ও জনিকে আটক করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কারণ ঐশী একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে। এই দু’জনকে গ্রেফতার করতে পারলে ঐশীর বক্তব্যকে পুলিশ আমলে নিতে পারবে।