দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছোট বেলায় খেলার ছলে টিকটিকি তাড়া করতে গিয়ে আমরা দেখেছি টিকটিকির লেজ খসে পড়তে পারে। সাধারণত শিকারীর চোখে ফাঁকি দিতে নিজের লেজ খসিয়ে টিকটিকি এ আচরণ করে থাকে। পরে হারানো লেজ ঠিকই সময় মতন গজিয়ে যায়। হারানো অঙ্গের পুর্নজন্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আগে জেনে নেয়া যাক এরকম আরো ৫টি প্রাণী সম্পর্কে যাদের শরীরে অংশ বিশেষ পুনরায় গঠিত হতে পারে।
এক্সোলটল
শরীরের অংশ বিশের পুণরায় গঠন করতে পারে এরকম প্রাণী হিসেবে এক্সোলটল এর বেশ খ্যতি রয়েছে। এটি দেহের ডানা, লেজ, হৃদপিন্ড কিংবা ব্রেণ এর অংশ বিশেষ পর্যন্ত পুণরায় গঠন করতে পারে। যদি কোন কারণে এই প্রাণী প্যরালাইসড বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয় তবে নিজ থেকেই নতুন নিউরণ এবং স্নায়ুতন্ত্র তৈরি করে নিতে পারে। এর মাধ্যমে এক্সোলটল তার শারীরিক অক্ষমতা কাটিয়ে উঠতে পারে। বিজ্ঞানীরা প্রাণীটির এই বৈশিষ্ট্য অবিশ্বাস্য বলে অভিহিত করেন।
ছবি:
হরিণ
একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী পাওয়া গেল যাদের শিং ক্রমাগত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হরিণ এর শিং বিশাল আকৃতির হতে পারে। বছর ধরে শিং এর আকৃতি বড় হয়। কোন কারণে শিং ভেংগে গেলেও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। এই ধরণের হরিণগুলোর শিং গোছানো আকৃতির হয় না। বরং গাছপালার শাখা প্রশাখার ন্যায় শিং বাড়তেই থাকে। বরফ সরিয়ে খাবার সন্ধান, শিকার, শত্রুকে ভয় দেখাতে এই পুর্নগঠিত হতে সক্ষম শিং, হরিণ ব্যবহার করে থাকে।
ছবি:
সামুদ্রিক স্কোয়ার্ট/টুনিকেট
আকৃতিতে ছোট হলেও সামুদ্রিত স্কোয়ার্ট এর জীনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে গুরুত্ব রয়েছে। স্কোয়ার্ট সাধারণত টুনিকেট নামেও পরিচিত। বিস্ময়কর হলেও সত্য এই যে স্কোয়ার্ট সম্পূর্ণ দেহই পুনরায় গঠন করতে সক্ষম। প্রাণীটি যৌন এবং অযৌন দুই উপায়েই বংশ বৃদ্ধি করতে পারে।
ছবি:
স্টার ফিশ
নামে মাছ হলেও আসলে কিন্তু এটি মাছ নয়। স্টার মিশ বাংলাতে তারা মাছ নামে পরিচিত। সাধারণত এটির ৫টি বাহু থাকে। তবে কিছু প্রজাতি পাওয়া গেছে যাদের ৪০ টির মত বাহুও দেখতে পাওয়া যায়। স্টার ফিশ এর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এর যে কোন বাহু দুর্ঘটনাক্রমে দেহ বিচ্যুত হলে নতুন করে বাহু তৈরি হয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার বিচ্যুত বাহুটিও নতুন একটি স্টার ফিশ এ রূপান্তরিত হতে পারে। দেহাংশ বিচ্যুত ঘটলে স্টার ফিশ এর স্নায়ুতন্ত্র কার্যকর থাকে। যার কারণেই পুর্নগঠন সম্ভব হয়।
ছবি:
ফিতা কৃমি
ফিতা কৃমি এমন একটি প্রাণী যাকে ছুড়ি দিয়ে দু ভাগ করলে ভাগকৃত অংশ দুটিতে পরিণত হয়। আগের মাথা এবং লেজ ঠিক রেখে নতুন মাথা এবং লেজ তৈরি করতে পারে এটি। ভয়ংকর এই প্রাণীটি মানুষ এবং পশু পাখির জন্য সমান ভাবেই ক্ষতিকর। এটি দ্রুত বংশ বিস্তারে সক্ষম।
ছবি:
এছাড়াও কয়েক প্রজাতির টিকটিকি, শামুক, কাঁকড়া, জেব্রা ফিশও দেহের বিভিন্ন অংশ বিশেষ পুর্নগঠন করতে পারে। অন্যান প্রাণী মানুষের মতন সুগঠিত নয়। আবার অন্যান্য প্রাণীদের সব বৈশিষ্ট্য মানুষের নেই। মানুষের চুল, ত্বক, বিভিন্ন পেশী নতুন করে তৈরি হলেও আস্ত এটা অঙ্গ পুর্নগঠিত হয় না। বিভিন্ন প্রাণীদের এই বিচিত্র বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন যাতে জানা যায় কি ধরণের জিন এই পুর্নগঠন কাজের জন্য দায়ী। মানুষের লিভার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, হৃদপিন্ডের পেশী গঠন হতে পারে আবার ছোট খাট আঘাতের প্রতিক্রিয়া দেহ নিজ থেকে সারিয়ে নিতে পারে। পুর্নগঠনে সক্ষম প্রাণীদের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য রহস্য জানা সম্ভব হলে হয়তো মানুষের কাজে লাগানো যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক