আমাদের বয়স যখন ২০ পেরিয়ে ৩০ এ প্রবেশ করে তখন আমাদের মানসিক চিন্তা চেতনাতেও বড় একটা পরিবর্তন ধরা পড়ে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবনার পরিবর্তন। আমরা অনেকেই এ অবস্থার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকি না, কারণ এই বয়সে আমরা যে আর্থিক অবস্থায় পৌঁছাই সেটা অনেকসময়ই আগে থেকেই ঠিক করা থাকে না। কাজেই আমাদের উচিত আগে থেকেই এ ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া, আসুন এ বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।
কেমন হবে সঞ্চয় পরিকল্পনা?
ঘুরেফিরে সেই পুরনো প্রশ্নটিই আসছে আবারও, অবসর জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে কি পরিমান অর্থ সঞ্চয় করতে হবে? এখানে আসলে আপনাকে আপনার মত করেই এ সঞ্চয়ের পরিকল্পনাটি করতে হবে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে যেমন কিভাবে অবসর জীবনযাপন করতে চান এবং সেজন্য আপনার বর্তমান আয় অনুযায়ী কতটুকু সঞ্চয় করা সম্ভব ইত্যাদি।
আপনার বর্তমান আয়ের যদি কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা না থাকে সেক্ষেত্রেও সঞ্চয়ের জন্য আপনাকে নিতে হবে বিশেষ পরিকল্পনা। আপনাকে তখন শুরু থেকেই কিছু অতিরিক্ত সঞ্চয় রাখতে হবে যাতে পরবর্তীতে হঠাৎ আয় কমে গেলেও যেন আপনি সঞ্চয়ের ঘাটতি পূরণে সমর্থ হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে ৩৫ বছর বয়সে আপনার সঞ্চয়ের পরিমান হওয়া উচিত আপনার পুরো ১ বছরের আয়ের সমান, তবে তা ব্যক্তি, পেশা কিংবা অবসর পরিকল্পনাভেদে ভিন্নও হতে পারে।
৩০ বছর বয়সেই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত যেন আপনার সঞ্চয়ের পরিমান কমপক্ষে আপনার ৬ মাসের যাবতীয় খরচাবলীর সমতুল্য হয়। প্রয়োজনে আপনাকে সঞ্চয়ের পাশাপাশি আরেকটি জরুরী ফান্ডও করতে হতে পারে যেটি আপনার আয়কর সহ বিভিন্ন তাৎক্ষণিক খরচের জন্য সহায়ক হবে।
পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির কথা মাথায় রেখে আপনার সঞ্চয়কৃত অর্থ কোন নিরাপদ ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করতে পারেন যা থেকে অর্জিত মুনাফা আপনার সঞ্চয়কে করবে আরও সমৃদ্ধ। তবে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কোন ফাটকা ব্যবসায় বিনিয়োগ না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আগেই বলা হয়েছে যে আপনার সঞ্চয়ের সীমারেখাটি আপনার পছন্দসই কিন্তু বাস্তবধর্মী জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী আপনাকেই ঠিক করতে হবে, যদিও এক্ষেত্রে কিছু সমস্যায় সকলকেই পড়তে হয় কেননা মানুষের রুচিবোধ সর্বদাই পরিবর্তনশীল। ৩০ বছর বয়সে আপনি আপনার অবসর কিংবা ভবিষ্যৎ জীবন যেভাবে কাটানোর পরিকল্পনা করবেন, ৩৫ বছর বয়সে এসে সে পরিকল্পনাটিই হয়তো আপনার আর মনঃপুত না হতে পারে।
তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা থাকলে আপনার সঞ্চয়কে তদানুযায়ী ভাগও করে নিতে পারেন।
সঞ্চয় প্রস্তুতিঃ
সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে এগুনোটাই বাঞ্ছনীয়। তবে এক্ষেত্রে স্থায়ী কোন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করাটা আপনাকে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে সহায়তা করবে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে জমি কিংবা এধরনের কোন সম্পত্তির মুল্য সময়ের সাথে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায় বিধায় স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় করাটা সঞ্চয়ের নিরাপত্তার জন্য সহায়ক।
এবং সর্বশেষে আসছে উইল প্রসঙ্গ। আপনার সারা জীবনের সঞ্চয় একটা অংশ থেকে যাতে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিত করাও আপনার অন্যতম দায়িত্ব। একাধিক উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রে বিবেচনাপ্রসূত বুদ্ধির প্রয়োগ করে সঞ্চয় ও সম্পত্তি বণ্টন করাটা শ্রেয়তর।