দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি ভুয়া ভিডিও কলের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের মুখের পরিবর্তে অনেকেই অন্য কারও মুখ ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও কলের মাধ্যমে। এইসব কল শনাক্ত করা জরুরি। তাহলে কীভাবে করবেন এটি?
ভিডিওর পেছনের পটভূমি বা ভিডিওর গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈশিষ্ট্য কৃত্রিমভাবে পরিবর্তন করা যায় এর মাধ্যমেই। কীভাবে ভুয়া ভিডিও কল শনাক্ত করবেন সেটি আজ জেনে নিন।
মূলত ভুয়া ভিডিও কল নানারকম হতে পারে। যেমন- ভিডিও কলে কেও তার পেছনে নকল কোনো পটভূমি তৈরি করে দেখালেন। তাছাড়াও, মনিটরের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের একটি ভিডিও রেকর্ড করে মিটিং চলাকালীন সেটা চালিয়েও দিতে পারেন। যেখানে কথা বলার কোনোই প্রয়োজন নেই। অনেকেই আবার লাইভ ভিডিও কলে ওয়েবক্যাম ইনপুটে ইউটিউবের ভিডিও জুড়ে দেন। আবার ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও অনেকেই ভুয়া ভিডিও কলও করে থাকেন। যার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ডিসপ্লেতে থাকা মুখ ও কণ্ঠ পরিবর্তন করাও সম্ভব। কিছু সফটওয়্যারের সাহায্যে এইসব ভুয়া লাইভ ভিডিও তৈরি করা হয়।
ডিপফেক প্রযুক্তি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি ডিপফেকগুলো বেশ বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে, তবে এটি ভুয়া ভিডিও তৈরি করে থাকে। ডিপফেক প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশের কারণেই একটি বাস্তব ভিডিও ও একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি ভিডিওর মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে।
যেভাবে ভুয়া ভিডিও কল শনাক্ত করবেন
ভুয়া ভিডিওর ক্ষেত্রে এর গুণমান দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে সেটি আসলে নকল। বিশেষ করে ডিপফেকের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত ভিডিওগুলো দেখলে বোঝা যাবে সেগুলো নকল। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ভুয়া ভিডিও কল শনাক্ত করা কঠিনও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে, একটি ভুয়া ভিডিও কল শনাক্ত করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কেও দেখে নেওয়া যাক।
ভিডিওর মান
ভুয়া ভিডিওগুলোর সাধারণ মান খারাপ হয়। তাছাড়াও ওয়াটারমার্ক কিংবা অন্যান্য চিহ্ন পরীক্ষার মাধ্যমেও ভিডিওটি ভুয়া কি-না বোঝা সম্ভব।
ভিডিও সাইজিং
ভুয়া ভিডিও কলের সময় সাধারণত ওয়েবক্যাম উইন্ডো কিংবা যে অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে তারসঙ্গে মানানসই করে ভিডিওর আকার পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। ভিডিওর আকার পরিবর্তন করা হলে ভিডিওর অনুপাত তখন বিকৃত হয়। এতে করে মুখ অতিরিক্ত লম্বা কিংবা অতিরিক্ত চওড়াও দেখা যেতে পারে।
কন্টাক্টস
ব্যক্তিটি কী আপনার পরিচিত বা কন্টাক্ট তালিকা থেকে কল করছে কি-না সেটি লক্ষ্য করুন। যদি না হয়, সেইক্ষেত্রে নামটি অদ্ভুত লাগে কি-না তা যাচাই করুন। এ ছাড়াও, কন্টাক্ট নামে কোনো অ্যাপের নাম উঠে আসে কি না সেটিও পরীক্ষা করে দেখুন।
লুপ এবং কাট
অনেক ভুয়া ভিডিও একটি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আবার শুরুতে চলে যায় ও চক্রাকারে চলতেই থাকে। অর্থাৎ ওই ভিডিওটি লুপ করতে থাকে। তাছাড়াও, ভিডিওটি শেষের দিকে হঠাৎ বন্ধও হয়ে যায়, তবে ভিডিও কলটি শেষই হয় না। এরকম হলেও সেটি ভুয়া ভিডিও কল হতে পারে বলে ধরে নিতে হবে।
আবার কেও যদি একটি ফেস সোয়াপিং অ্যাপ ব্যবহার করে, সেইক্ষেত্রে সোয়াপ করা মুখ সঠিকভাবে বসার সম্ভাবনাও খুব কমই থাকে।
মেনিক্যামের মতো সফটওয়্যারে তৈরি ভুয়া কলগুলো বেশ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হতেই পারে। তবে আপনি যদি খুবই উন্নতমানের হার্ডওয়্যার ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে সেগুলো খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়।
অপরদিকে স্মার্টফোনে ভুয়া ভিডিও কলিং করা খুব সহজ না। এতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসটাইমের মতো মোবাইল অ্যাপে ভুয়া ভিডিও কলিং ও এই জাতীয় অন্যান্য স্ক্যাম প্রতিরোধ করার জন্য বিল্ট-ইন সুরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে শেষ কথা হলো, ফোন নম্বর, ভিডিওর গুণমান ও এই জাতীয় তথ্যগুলো ভালো করে যাচাই করলেই আপনি এগুলো ধরতে পারবেন খুব সহজেই।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org