দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে দেখা যায় শিশুর বয়স ৬ মাস হতে না হতেই শিশুকে কৃত্রিম দুধ, বাজারচলতি শিশুখাদ্য কিংবা অন্য খাবারে অভ্যস্ত করিয়ে ফেলছেন বহু মা। স্তন্যপান করালে ওজন বেড়ে যায় এই ধারণা থেকেই অনেক মা এটি করেন। এটি কী ঠিক?
দেখা যাচ্ছে প্রায় সময় শিশু কাঁদছে, নিশ্চই পেট ভরছে না ভালো করে। শুধুমাত্র মায়ের দুধে কি আর পেট ভরে? মায়ের দুধের চেয়ে বাজারচলতি কৃত্রিম দুধের পুষ্টিগুণ নাকি অনেক বেশি। স্তন্যপান করালেই ওজন বেড়ে যাবে, আবার ফিগারও নষ্ট হবে। তাই শিশুকে দুধ খাওয়ানো নিয়ে এমন চিন্তাভাবনা এখনও ঘুরপাক খায় সর্বত্রই।
এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, বাস্তবতা উল্টো। জন্মের পরে প্রথম ৬’মাস শুধু স্তন্যপান করালে শিশুর যথাযথ প্রয়োজনীয় পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধি, মায়ের ওজন বৃদ্ধি কিংবা চেহারা নষ্ট হওয়ার বদলে বরং তাদেরও ফ্যাট ঝরে অনেকটাই দ্রুত।
তবে যে মায়েরা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন, তিনি যাতে দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি অবশ্যই খান, সেই বিষয়ে অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
তবে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সাধারণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন নতুন মায়েরা। যারমধ্যে একটি সমস্যা হলো যত্নের অভাব। স্বাভাবিক প্রসব হলে দুধের উৎপাদন অনেক দ্রুত হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হলো ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময় লেগে যায় দুধ উৎপাদনে। এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় মাকে পুরোপুরিই বিশ্রামের মধ্যে থাকতে হবে। পরিবারের লোকদের সেই বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, তবেই সেই মা প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর তার শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারবেন।
অপরদিকে অপর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন নতুন মায়েদের আরেকটি চিন্তার কারণ। এই ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার প্রাথমিক পর্যায় থেকে মায়েদের খাওয়া-দাওয়ার দিকে বাড়তি নজরও দিতে হবে। এই সময় প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য অপরিহার্য। যেসব মায়েরা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন, তিনি যাতে দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি অবশ্যই খান, সেই বিষয়ে নজর রাখতে হবে। মায়ের ডায়েটে বেশি করে বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার, মৌসুমি ফল, মৌরি রাখতে হবে। মায়ের নিজের শরীর এবং মনের যত্ন নেওয়াটাও জরুরি। মা যদি সুস্থ থাকেন, তা হলেই ঠিকভাবে স্তন্যপান করাতে পারবেন তার সন্তানকে।
যে সব খাবার স্তন্যপান করানোর সময় খাওয়া যায় না, সেদিকেও নজর দেওয়া বেশি জরুরি। তারমধ্যে সবের উপরেই রয়েছে ক্যাফিনযুক্ত খাবার। ক্যাফিন শুধু কফিই নয়, চা, এতে চকোলেটেও থাকে। এই সময় সব দিকেই বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
অনেক মায়েদের শরীরে দুধের উৎপাদন বেশি হয়। সেই ক্ষেত্রে স্তন ভারি হয়ে যাওয়া, স্তনে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যায় দেখা দেয়। এই ক্ষেত্রে মায়েরা স্তন্যপান করানোর পর কীভাবে বাকি দুধ বের করে দেবেন, চিকিৎসকের কাছ থেকে সেই প্রশিক্ষণ নেওয়াটা জরুরি। স্তন্যপানের সময় শিশুদের আচরণের কারণে স্তনবৃন্তে অনেক সময আঘাত লাগে, সেই ক্ষেত্রে মায়েদের মলমও লাগাতে হতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org