দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর কবে কার্যকর করা হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষ এ রায় কার্যকর করবে। প্রচলিত কারা বিধি অনুযায়ী রায়ের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
কারা বিধির ৯৯১-এর ৬ উপবিধিতে বলা হয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আদালতের আদেশ পৌঁছানোর পর ২১ দিনের কম নয় এবং ২৮ দিনের বেশি নয় এর মধ্যবর্তী যেকোনো সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতি বা সংশ্লিষ্ট আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলে রায় কার্যকর করাও স্থগিত হবে। এ রকম কোনো স্থগিতাদেশ না থাকলে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবশ্য কাদের মোল্লার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানানোর সুযোগ থাকলে এবং তা করা হলে এই হিসাব পাল্টে যাবে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদসহ আরো অনেকে যুক্তি দেখিয়েছেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে বিচার হওয়ায় এই রায় পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ নেই। তবে বিশিষ্ট আইনজীবী আনিসুল হক দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, আপিল বিভাগ চাইলে রায়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন। ফলে রিভিউ আবেদন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
রিভিউ করার সুযোগ থাকলে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউর সময় পাবেন কাদের মোল্লা। এক্ষেত্রে আসামিপক্ষকে রায় স্থগিত করার জন্য আবেদন করতে হবে। আদালত তা গ্রহণ করে আসামিকে রিভিউয়ের আবেদন করার সুযোগ দিতে পারেন। আদালত চাইলে নির্ধারিত ৩০ দিনের আগেই রিভিউয়ের আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করতে পারেন। এ প্রক্রিয়ায় দণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে সময়সীমা বেড়ে যাবে। রিভিউতে ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলে তখন রায় কার্যকর হতে পারে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে।
কারাবিধির ৯৯১-এর ১ উপবিধিতে বলা হয়েছে, ফাঁসির দণ্ড ঘোষণা করার দিনই সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতের আদেশ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কারা কর্তৃপক্ষকে ওই আদেশ সম্পর্কে অবহিত করবেন। নিয়মানুযায়ী, আপিল আদালতের রায় ও আদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানোর পর ট্রাইব্যুনাল আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। ওই পরোয়ানা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে পড়ে শোনাবে।
কারা বিধির ৯৯১ ধারার ৩ উপবিধিতে বলা হয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইচ্ছা করলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন। তবে সাত দিনের মধ্যে ক্ষমার আবেদন করতে হবে। ৫ উপবিধিতে বলা হয়েছে, সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন না করলেও পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২১ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার সুযোগ পাবেন আসামি। এরপর রাষ্ট্রপতির নেওয়া সিদ্ধান্ত না পৌঁছানো পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে না। কারাবিধির ৯৯১তে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষ আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করবে। ফলাফল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই আবার কারা কর্তৃপক্ষকে জানাবে।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্ব ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখেন।
তবে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ক্ষমা চাইবেন কি না, সে বিষয়ে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও জড়িত। কারণ ক্ষমা চাইলে তিনি যে দোষী সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। আর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লা দোষ স্বীকার করলে তা জামায়াতের এত দিনের দাবি (তারা যুদ্ধাপরাধী নয়) মিথ্যা প্রমাণিত হবে। কাজেই কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনা নাও করতে পারেন। সূত্র: অনলাইন।