দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই বিশাল পাখিগুলো উচ্চতায় ৫ ফুটের মতো। ভয়ঙ্কর আক্রমণকারী এবং শিকারি। দৈত্যাকার ঠোঁট দিয়ে শিকারকে রীতিমতো পুরো গিলে খায়। শিকার ধরতে জলাভূমিতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একা দাঁড়িয়ে থাকে স্থিরভাবে। এমনই এক পাখি যার নাম ‘শোবিল’।
ভয়ঙ্কর ও প্রাগৈতিহাসিক চেহারার অধিকারী পাখিটি ১ দশমিক ৫ মিটার কিংবা ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বাও হতে পারে। এর তীক্ষ্ণ ধারযুক্ত ঠোঁট ১ ফুট দীর্ঘ হয়ে থাকে।
শোবিল পাখিরা বেশিরভাগ সময় একাই থাকে। তবে প্রজননের সময় জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। একসঙ্গে ৩টি ডিম দেয়। যদিও ভাইবোনদের মধ্যে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ সাধারণত কেবলমাত্র একটি বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এরা তাদের ভাই-বোনদেরও মেরে ফেলে, যে বেঁচে যায় সেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। সে কারণে এদের একাকী পাখিও বলা হয়।
২০১৫ সালের আফ্রিকান পক্ষীবিজ্ঞান নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, শোবিল পাখি সবচেয়ে বেশি শিকার করে ‘ক্যাটফিশ’ নামে এক ধরনের মাছ। এর খাবারের প্রায় ৭১ শতাংশই বলা যায় ক্যাটফিশ। তবে এরা ঈল এবং সাপ- এমনকি বাচ্চা কুমিরও গিলে খেয়ে ফেলে অনেক সময়।
প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যের সম্প্রচারক এবং প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ডেভিড অ্যাটেনবরোর সিরিজ ‘আফ্রিকা’র একটি ক্লিপে ধরা পড়েছে যে, বয়স্ক ছানাটি তার ছোট ভাইকে কামড় দিচ্ছে। মা যখন নীড়ে ফিরে আসলো, তখন এরা ছোট বাচ্চাদের কোনো যত্নই নেয় না।
যদিও কখনও কখনও শোবিলকে ভুলভাবে ‘সারস’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। পেলেকানিফর্মস অর্ডার থেকে এর পূর্বপুরুষরা ক্রিটেসিয়াস পিরিয়ডে (ভূতাত্ত্বিক সময়কাল) শেষে (১৪৫ মিলিয়ন থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে) পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিল বলেই ধারণা করা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন- ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার) রেড লিস্টে বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে শোবিল পাখিটি। প্রাগৈতিহাসিক চেহারার অধিকারী পাখিগুলো মাত্র ৫ থেকে ৮ হাজারের মতো পাখি পৃথিবীতে অবশিষ্ট রয়েছে। তথ্যসূত্র: সাইভ সায়েন্সের ওয়েবসাইট (বাংলায় অনূদিত) হতে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org