ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ দেশ আজ কোন দিকে যাচ্ছে? একদিকে বিদ্যুতের চরমতম সংকট- দেশের ইতিহাসে মনে হয় এতটা সংকট আর কখনও হয়নি। অপরদিকে হরতাল-ধর্মঘটে আজ সাধারণ মানুষ দিশেহারা। আজ মানুষ এর শেষ দেখতে চায়।
গত তিন দিন ধরে চলছে হরতাল। বিরোধী দল হরতাল-ধর্মঘট করতে এটিই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আজ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে এভাবে চললে এদেশ দেওলিয়া হয়ে যাবে। এমনিতেই বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দেশের উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তারওপর হরতাল ধর্মঘটে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কি আকার ধারণ করেছে তা বলে বোঝানো যাবে না।
বিদ্যুৎ সমস্যায় জর্জরিত দেশবাসী
বিদ্যুতের সমস্যা আমাদের আগেও ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা এমন একটি পরিস্থিতিতে উপনিত হয়েছে যে, দেশে এক প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমানে চাহিদার বিপরিতে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তাতে ২ হাজার মেগাওয়াট লোড শেডিং করতে হচ্ছে। যে কারণে প্রতিদিন দিনে অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা এবং রাতে মিল, কল-কারখানা বন্ধ থাকার কারণে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লোড শেডিং করতে হয়। এই অবস্থায় দেশে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যবস্থা কিভাবে বহাল থাকবে? দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। শিল্প-কারখানা এভাবে লোড শেডিং এর কবলে পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে একবার ভেবে দেখুন।
হরতাল-ধর্মঘট
এমনিতেই বিদ্যুতের সমস্যার কারণে উৎপাদনে ভাটা তারওপর আরেক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। আর তা হলো হরতাল-ধর্মঘট। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে টানা-পোড়েনের বিষয়টি আরও গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গুম ও নিখোঁজের ঘটনা বেশি ঘটছে। বিরোধী দল দাবি করছে, সরকার ইচ্ছে করে গুম ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটিয়ে ফায়দা লুটছে। অপরদিকে সরকার বলছে, বিরোধী দল নিজেরাই এক একটা কাণ্ড ঘটিয়ে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। তারা আন্দোলনের ইস্যু না পেয়ে, নিজেরাই গুম নাটক সাজিয়ে আন্দোলন তীব্র করছে।
ঘটনা যায়ই ঘটুক না কেনো। সরকার এবং বিরোধী দল উভয়কে সংযত হতে হবে। কারণ উভয় দলই জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনগণ যেমন নির্বাচিত করতে পারেন তেমনি আবার আস্তাকুড়ে নিক্ষেপও করতে পারেন-অন্তত ইতিহাস তাই বলে। তাই উভয় দল এবং গোষ্ঠিকে সংযত হতে হবে। তানাহলে জনগণ উভয় জোটকেই দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। সরকার ভাবছে তারা যে সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন সেগুলোকে পুঁজি করে ভবিষ্যতে জনগণের দারস্থ হবেন। অপরদিকে বিরোধী দল ভাবছে, সরকারের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে তারা জনগণের ম্যাণ্ডেড চাইবেন। কিন্তু জনগণ এখন যথেষ্ট সজাগ। তারা বুঝে-শুনেই ভোট দেবেন।
তাই গুম-হত্যা ও হরতালের রাজনীতি পরিহার করতে হবে এবং দেশের মানুষের জানমালের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব অবহেলা কোন ভাবেই করা যাবে না। আজকের সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সরকারকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণ কোন সংঘাত, হিংসা, হানাহানি চাইনা। জনগণ শান্তিতে বসবাস করতে চাই। এটাই তাদের শেষ কথা।