দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ উচ্চ রক্তচাপ এখন কিন্তু কেবল বয়স্কদের অসুখ নয়। এই অসুখে ভুগছেন কমবয়সিরাও। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণেই এমনটি ঘটছে। প্রতিদিনের অভ্যাসে কী কী বদল আনলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে?
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার অর্থই হলো আতঙ্ক। উচ্চ রক্তচাপ এখন কেবল বয়স্কদের রোগ নয়। কমবয়সিদের মধ্যেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই রক্তচাপের মাত্রা।
কাজের কারণে ব্যস্ততা, প্রচণ্ড উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বাইরের নানা ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস, ঘুম কম হওয়া ও বিভিন্ন কারণে অল্পবয়সিদের রক্তচাপের মাত্রাও দিনকে দিন বাড়ছে। রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার অর্থই হলো বড় প্রভাব পড়ে হৃদযন্ত্রে। ধীরে ধীরে হৃদযন্ত্র বিকল হতে শুরু করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস, কিডনি রোগের মতো বিভিন্ন জটিল অসুখও মাথাচাড়া দেবে।
রক্তচাপ বেড়ে গেলে চিকিৎসকরা শুধু ওষুধ খাওয়ার কথা নয়, জীবনযাত্রাতেও প্রয়োজনীয় কিছু বদল আনতে বলে থাকেন। শুধুমাত্র ওষুধ খেয়ে গেলেই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রতিদিনের অভ্যাসে ছোট ছোট কিছু বদল আনলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
রক্তচাপ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়
রক্তচাপ ১৪০/৯০ ছাড়ালেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বলে। যে কোনও সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকা উচিত ১২০/৮০।
যদি কারও রক্তচাপ ১৪০/৯০-এর বেশি হয়ে থাকে, তখন তার রক্তচাপ বেড়েছে সেটি বলা যায়। হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। আচমকা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ অর্থাৎ স্ট্রোকের জন্যও দায়ী এই বিষয়টি।
জীবনযাত্রায় কী কী বদল আনলে ভালো থাকা যাবে
# প্রথম কাজ বাড়তি ওজন কমানো। ওজন বাড়তে শুরু করলে রক্তচাপও এক পর্যায়ে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। তখন ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, এতে হার্টের অসুখের ঝুঁকি আরও বাড়বে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা এবং সঠিক ডায়েট করে ওজন কমাতে হবে।
এক মাসে বদলে যাবে জীবন! কী কী অভ্যাস রপ্ত করবেন
# কোলেস্টেরল আরও বাড়তে পারে, এমন সব খাবার না খাওয়াই ভালো। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কিংবা এলডিএল যাতে বেড়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য বাইরের খাবার, ভাজাভুজি, বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া মোটেও চলবে না। বেশি করে খেতে হবে সবুজ শাকসব্জি, ফল, দানাশস্য যেমন- ওট্স, ডালিয়া ইত্যাদি।
ডায়েটে নিয়মিতভাবে রাখতে হবে দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক। দইয়ে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে, যা রক্তচাপ বশে আনতে সাহায্য করে থাকে।
# লবণ খাওয়া কমাতে হবে। বেশি পরিমাণে সোডিয়াম ও তুলনায় কম পরিমাণে পটাশিয়াম শরীরে গেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন এক চা চামচের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। তবে কাঁচা লবণ না খেয়ে রান্নায় লবণ দিয়ে খাওয়াই ভালো। উচ্চ রক্তচাপ কিংবা কিডনির সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগলে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
# তামাক জাতীয় জিনিস পুরোপুরি ছাড়তে হবে। মদ্যপানও করা যাবে না।
# পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৭ হতে ৮ ঘণ্টা টানা ঘুম দরকার।
# আবার কাজের ফাঁকে নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হবে। জিমে যাওয়ার সময় না থাকলে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। সাইকেল চালানো, সাঁতার কিংবা যে কোনও খেলাধুলা করতে পারলে ভালো। সঙ্গে সকালে ঘুম থেকে উঠে, বিকেলে ও রাতে খাবার পরে অল্পবিস্তর হাঁটাহাটি করলেও সুফল পাওয়া যাবে।
# নিয়মিতভাবে রক্তচাপ মাপাটা জরুরি। আবার বয়স কম হলেও রক্তচাপ মাপতে হবে। বিশেষ করে যদি পরিবারে এমন কোনও রোগ থেকেই থাকে, সেই ক্ষেত্রে সময় থাকতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org