দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাঝে-মধ্যেই চোখের সামনে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া ‘ড্রাই আইজ়’-এরই একটি লক্ষণ। কোনও কারণ ছাড়াই চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ে? এটিও ড্রাই আইজ়ের কারণেও হতে পারে।
হয়তো আপনি অফিসে ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করছেন, আচমকাই চোখ চুলকোনো শুরু হলো, আর তখন পানি পড়তে শুরু করলো। এমনটি অনেকের সঙ্গেই কিন্তু ঘটে। অনেকেই তখন মনে করেন পাওয়ার বেড়ে গেছে হয়তো। এর কারণও হতে পারে অফিসের এসি। শুনতে অবাক লাগলেও চিকিৎসকদের মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকলে চোখের বারোটা বাজতেই পারে। মূলত শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বাতাসের আর্দ্রতা শুষে নেয়। বদ্ধ ঘরে দীর্ঘ সময় এসি চলালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ একেবারেই কমে যেতে পারে। তখন বাতাসের আর্দ্রতা কমে গেলে তার প্রভাব পড়ে আপনার চোখের উপর। বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলে, ‘ইভাপোরেটিভ ড্রাই আইজ়’। চোখের পাতাতে থাকে এমন সব গ্রন্থি, যেগুলো থেকে তখন জলীয় পদার্থ ক্ষরিত হয়। আবার ক্ষরিত হয় স্নেহপদার্থও। দীর্ঘ সময় ধরে এসিতে থাকলে চোখের পাতায় থাকা এই লিপিড উৎপাদক গ্রন্থিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়তে পারে অশ্রুগ্রন্থির উপরে। সব মিলিয়ে চোখ চুলকানির সমস্যাও বাড়ে। এর উপর দীর্ঘক্ষণ ‘স্ক্রিন টাইম’ অর্থাৎ মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস এই সমস্যা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
‘ড্রাই আইজ়’-এর প্রধান উপসর্গ
মাঝে-মধ্যে চোখের সামনের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া ‘ড্রাই আইজ়’-এর একটি লক্ষণও। কোনও কারণ ছাড়া চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ে? এটি ড্রাই আইজ়ের কারণেও হতে পারে। চোখ থেকে পানি পড়ার অর্থই হলো ‘টিয়ার ফিল্ম’ চোখকে আর্দ্র রাখতে পারছেন না। তাই শুষ্ক চোখকে আর্দ্র রাখতে পানি উৎপাদন করছে। চোখে ব্যথা এবং ক্লান্তিও এর একটি লক্ষণ। চোখে যখন পানি কমে যায়, তখন বার বার পলক ফেলে চোখ নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টাও করে। যে কারণে চোখে একটি ক্লান্তিও আসে।
‘ড্রাই আইজ়’-এর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী সুরক্ষা নেবেন?
# চোখের পাতায় কোনও রকম ধুলোবালি জমতে দেবেন না। কারণ ধুলো থেকেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সেই কারণে চোখ সব সময়ে পরিষ্কার রাখাটা প্রয়োজন। বাইরে থেকে ফিরে ভালো করে চোখ ধুয়ে নিতে হবে। চোখে-মুখে পানি দেওয়ার আগে ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। তবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চোখে পানির ঝাপটা দেওয়ার অভ্যাস খারাপ। দিনে ২ থেকে ৩ বারের বেশি পানির ঝাপটা না দেওয়াই ভােলো, নইলে চোখের পানি ধুয়ে গিয়ে আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
# সারা দিন কনট্যাক্ট লেন্স পরে থাকলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দিনে ১০-১২ ঘণ্টার বেশি লেন্স পরে না থাকাই উত্তম।
# দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে না থাকা ভালো। অফিসে থাকলেও মাঝে-মধ্যে বিরতিও নিতে হবে। মোবাইলে ফোনের দিকে টানা অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন না।
# সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া দরকার। পানি খেলে শরীরও আর্দ্র থাকে। তাছাড়াও তরমুজ, শসা, স্ট্রবেরির মতো জলযুক্ত ফল বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হবে না।
# মাঝে-মধ্যে চোখে গরম ভাব দিতে পারেন। চোখ শুষ্ক হয়ে গেলে এই টোটকা বেশ কাজেও দেয়। দিনে ২ থেকে ৩ বার চোখে কাপড়ের সেঁক দিতে পারলে চোখের ক্লান্তি দূর হবে, ব্যথাও কমবে ও আরামও পাবেন এতে করে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org