দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নেপাল ও ভারতে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা এবং ভূমিধসে দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি। শুধুমাত্র নেপালেই কমপক্ষে ১১২ জন নিহত হয়েছেন।
অবিরাম বর্ষণের জেরে দক্ষিণ এশিয়ার এই সৃষ্ট দুর্যোগে তারা প্রাণ হারান। এছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন আরও বহু মানুষ।
মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট এবং আল-জাজিরা।
গতকাল (শনিবার) রাত সাড়ে ১০টায় নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ৯৯ জন নিহত, ৬৮ জন নিখোঁজ ও আরও ১০০ জন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তবে কাঠমান্ডু পোস্টের স্থানীয় সংবাদদাতাদের প্রাপ্ত তথ্য ও নেপাল পুলিশ এবং সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সদর দপ্তরের নিশ্চিত হওয়া তথ্যে দেশটিতে ১১২ জন মারা গেছেন বলে জানা যায়। যারমধ্যে ললিতপুরে কমপক্ষে ২০ জন, কাভরে ৩৪ জন, ধাদিংয়ে ১৫ জন, কাঠমান্ডুতে ১২ জন, মাকাওয়ানপুরে ৭ জন, ভক্তপুর এবং পাঁচথারে ৫ জন, সিন্ধুপালচোকে ৪ জন, দোলাকায় ৩ জন, ধনকুটায় ২ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন।
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পাঁচথার, ঝাপা, মহোত্তারি, কাঠমান্ডু, কাভরে, ললিতপুর, সিন্ধুলি, ধাদিং, সিন্ধুপালচোক, দোলাখা ও রূপানদেহি জেলায় অন্তত ৬৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে যে, বন্যা ও ভূমিধসের জেরে পার্বত্য এই দেশটির অনেক অংশে মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে, অনেক মহাসড়ক ও রাস্তার চলাচল ব্যাহত হয়েছে, শত শত বাড়ি এবং সেতু চাপা পড়েছে কিংবা ভেসে গেছে ও শত শত পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়র কারণে বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছেন বলেও জানা যায়।
বন্যা এবং ভূমিধসে নেপালের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাঠমান্ডু উপত্যকায় কমপক্ষে ৩৭ জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি বিশাল ক্ষয়ক্ষতিও হয়। রাজধানী কাঠমান্ডুর সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগকারী সমস্ত হাইওয়ে ও সড়ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
শনিবার কাঠমান্ডু উপত্যকায় ১৯৭০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মূলত ওই বছর থেকেই দক্ষিণ এইশয়ার এই দেশটি প্রথম দেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাপ ও রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা শুরু করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩ দিন ধরে অবিরাম বর্ষণে ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের ৪৬ জন নিহত হয়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org