দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রায় সময় দেখা যায় জ্বরের পর স্বাদ চলে যেতে। তবে এই সময় কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কীভাবে করবেন? আজ জেনে নিন সেই বিষয়টি।
গরম কমে গিয়ে তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। এমন ঋতু পরিবর্তনের সময় বেশ কিছু ভাইরাসের আক্রমণে জ্বরের ফাঁদে পড়ছেন অনেকেই। সেইসঙ্গে থাকছে সর্দি, কাশির মতো সমস্যাও। কয়েকদিন জ্বর থাকার কারণে মুখের স্বাদও চলে যাচ্ছে। জ্বর থেকে সেরে ওঠার পরও সেটি ফিরে আসছে না। যে কারণে তারা কিছু খেতেই চাইছেন না।
এই সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা: আশিস মিত্র বলেছেন, ‘আবহাওয়া বদলে যাওয়ার সময় অনেকের শরীরে বাসা বাঁধে কিছু ভাইরাস। এই সব ভাইরাস স্নায়ুর উপর আঘাত হানতে পারে। যে কারণে নার্ভগুলো দুর্বল হয়ে যায়। তখন মুখে কোনো স্বাদ পাওয়া যায় না। তবে এই নিয়ে বেশি ভেবে কোনো লাভ নেই। বরং কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে চটজলদি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন অনায়াসে।’
ভিটামিন ওষুধ খান
জ্বর হতে সেরে ওঠার মোটামুটি ৭ হতে ১০ দিনের মধ্যে এমনিই এই সমস্যা মিটে যায়। তবে যদি দ্রুত সেরে উঠতে চান, তাহলে খেতে পারেন মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট। এই ধরনের ট্যাবলেট খেলে, নার্ভ সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেইসঙ্গে বাড়ে ইমিউনিটিও। সেজন্য অনায়াসে স্বাদ ফিরে পাওয়া যায়।
এইক্ষেত্রে দিনে একটি করে ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে দিন। খাবার খাওয়ার পরই এই ওষুধ খান। তাতে পাবেন উপকার।
তিতা জিনিস খাওয়া শুরু করুন
আমাদের অতি পরিচিত সব তিতা খাবারে রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজের ভাণ্ডার। এমনকি এগুলোতে ভালো পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যে কারণে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানোর কাজে এর জুড়ি নেই। যে কারণে তিতা খাবার খেলে অনেকের নার্ভ দ্রুতই কাজ শুরু করে। সে জন্য খুব সহজেই মুখে ফেরে স্বাদ। তাই স্বাদ চলে গেলে অবশ্যই তিতা খান।
পানিপান বাড়ান
জ্বরের সময় শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে। তাই এই সময় বেশি পানিপান করুন। এই কাজটা করলে পানির ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কাও কমবে। আবার শরীরও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে।
পাতে রাখুন শাক-সবজি
জ্বর থেকে সেরে ওঠার পরই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই এই সময় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে খেতে হবে। তাই ডায়েটে রাখুন মৌসুমি শাক-সবজি। সেইসঙ্গে ডায়েটে জায়গা করে দিতে হবে বিভিন্ন ফল। সেইসঙ্গে ডিম, মাছ, মাংসের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে। এতে করে শরীরের হাল ফিরবে। দ্রুতই মুখে আসবে স্বাদ।
তেল-মশলাদার খাবার নয়
অনেকেই স্বাদ ফেরাতে নিয়মিত তেল, মশলা ও ঝাল সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন। এই ভুলটা করেন বলে তাদের শরীরের বেজে যায় বারোটা। তাই চেষ্টা করুন জ্বরের সময় কিংবা জ্বরের পর এই ধরনের খাবার না খাওয়ার। এর পরিবর্তে ভরসা রাখতে পারেন বাড়ির তৈরি হালকা খাবার। এই নিয়মগুলো মেনে চললেই পাবেন এনার্জি। দূর হবে ক্লান্তি। সেইসঙ্গে মুখের স্বাদও ফিরে পাবেন। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org