দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টিতে কখনও গরম গরম ভাব আবার কখনও ঠাণ্ডায় চট করে শরীর খারাপ হয়ে যায়। বিশেষ করে এই সময় শিশুরা বেশি ভোগে। তাহলে কীভাবে খেয়াল রাখবেন বাবা-মায়েরা?
ইতিমধ্যেই ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও খানিকটা নেমে এসেছে। সন্ধ্যা লাগলেই হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টিতেই কখনও গরম আবার কখনও ঠাণ্ডায় চট করে শরীর খারাপ হয়ে যায়। বিশেষ করে শিশুরা এই সময় বেশি ভোগে। ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকলে খুব তাড়াতাড়ি সর্দিকাশি ধরবে সেটিই কিন্তু স্বাভাবিক। তাই এই সময় ভাইরাল জ্বরেও ভোগে শিশুরা। শীতের সময় রোগভোগের হাত থেকে সন্তানকে বাঁচাতে বিশেষভাবে যত্ন নিতেই হবে বাবা-মায়েদের।
এই বিষয়ে শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানিয়েছেন, হেমন্তের সময়টিতেই হিম পড়ে ঠাণ্ডা লেগে যায় শিশুদের। তাই মাথা সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। বিশেষ করে খুব সকালে স্কুলে যায় যেসব শিশুরা, তাদের গরম জামাকাপড় পরাতে হবে। সন্ধ্যার দিকে বাইরে বের হলেই মাথা স্কার্ফ কিংবা টুপিতে ঢেকে দিন। ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকলে গলাও ঢেকে রাখতে পারেন।
রাতের দিকে অনেকেই ফ্যান চালান অনেক সময়, বিশেষ করে যাদের বেশি গরম লাগে তাদের। যদি ফ্যান চালাতেই হয়, তাহলে গতি কম করে রাখবেন। সারারাত শিশুর গায়ে পাতলা চাদর রাখতে হবে, তবে খুব ভারি কিছু তার গায়ে চাপিয়ে রাখবেন না। ঘুমের সময় শরীরের মেটাবলিক রেট অনেক কম থাকে। খুব বেশি ঢাকাচাপা দিলে হজমের সমস্যাও হতে পারে।
শীতের দিনে গোসল নিয়েও অভিভাবকদের মনে নানা প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ, উষ্ণ পানিতে প্রতিদিনই গোসল করানো যেতেই পারে শিশুকে। এতে ত্বকের আর্দ্রতাও বজায় থাকে, শরীরে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়। তবে যদি টনসিল ফুলে যায় কিংবা খুব হাঁচি-কাশি হতে থাকে, তাহলে এক দিন অন্তর গোসল করাবেন বা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছিয়ে দিতে পারেন। গোসলের পরে ভালে করে গা মুছিয়ে গরম জামা পরিয়ে দিতে পারেন।
শীতকালে শিশুসহ প্রায় সবার ত্বকের অ্যালার্জিও বেশি হয়। কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস থাকলে র্যাশ কিংবা ফুস্কুড়ি হতেও দেখা যায় ত্বকে। সেই ক্ষেত্রে সব সময়ই চেষ্টা করতে হবে গ্লিসারিন সাবান এবং কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করার জন্য। অ্যালার্জি হলে শিশুকে তেল মালিশ করাবেন কিংবা তার গায়ে ময়েশ্চারাইজ়ার লাগাবেন কি-না, তা চিকিৎসকের নিকট থেকে জেনে নিতে হবে। শিশুকে সুতির জামাকাপড়ই বেশি পরাবেন। সিন্থেটিক কিছু পরালে র্যাশের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
শিশুর রোগ থেকে রক্ষা করতে চাওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলুন। ভিটামিন সি যুক্ত ফল, মৌসুমি সব্জি খাওয়ান। প্রচুর শাকসব্জি খাওয়াতে হবে শিশুদের। বাইরের খাবার একেবারেই দেওয়া যাবে না। আইসক্রিম কিংবা ঠাণ্ডা পানীয় যেনো না খায় শিশু সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর শ্বাসকষ্ট কিংবা ধুলো থেকে আলার্জি হলে রাস্তায় বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরান। যদি জ্বর হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবে ওষুধ খাওয়াবেন। নিজে থেকে কখনও আপনার শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন না। জ্বর যদি ৩ দিনের বেশি থাকে, তাহলে চিকিৎসককে দেখিয়ে নিতে হবে অবশ্যই। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org