দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁসের ঘটনার রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের এক কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে।
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁসে জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে শনাক্ত করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হচ্ছেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী, ফারুক ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের সহকারী মেহেদী হাসান। গতকাল বিকালে ডিবি পুলিশ এ তিনজনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে। এরমধ্যে নয়ন আলীকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলেছে, মেহেদী পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, মেহেদী মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন ও ব্ল্যাকমেইল করে ট্রাইব্যুনালের ওই দুই কর্মচারীকে ব্যবহার করে রায়ের খসড়া কপি ফাঁস করেছেন। ফারুক ট্রাইব্যুনালের স্টেনোগ্রাফার ও নয়ন আলী মাস্টাররোলে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষ হওয়ায় নয়ন আলী ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার শাখায়ও মাঝে মধ্যে কাজ করতেন। এ সুযোগে নয়ন পেনড্রাইভে মেহেদী হাসানের কাছে অর্থের বিনিময়ে রায়ের খসড়া কপি তুলে দেন। রায় যখন ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটারে কম্পোজ করা হচ্ছিল, তখন নয়ন আলী পেনড্রাইভে সেটির খসড়া অংশ সাকার আইনজীবীর সহকারীকে সরবরাহ করেন। এদিকে রায়ের খসড়া ফাঁস হওয়ার ঘটনায় গতকাল তথ্যপ্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি’র জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, টাকার লোভে পড়ে ট্রাইব্যুনালের কর্মচারীরা রায়ের খসড়া কপি ফাঁস করেছেন। পেনড্রাইভ কিংবা সিডিতে করে এ রায়ের কপি সরবরাহ করা হয়েছে বলে তার ধারণা। প্রাথমিকভাবে রায় ফাঁসের ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়েছে। ওই ৩ জনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরআগে গতকাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামের চেম্বারে তল্লাশি চালিয়ে একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, টাকার লোভ ও ব্ল্যাক-মেইলের শিকার হয়ে নয়ন আলী ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকে রায়ের কপি মেহেদী হাসানের কাছে সরবরাহ করেছে। এ ঘটনায় ফারুক নামে ট্রাইব্যুনালের আরেক কম্পিউটার অপারেটর জড়িত। এ দু’জন সাকার আইনজীবীর সহকারী মেহেদী হাসানের কাছে ওই রায়ের কপি সরবরাহ করেছিলেন বলে তথ্য পেয়েছেন তারা। এ অভিযোগে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৭ ও ৬৩ ধারায় শাহবাগ থানায় ওই মামলা করা হয়েছে। মামলার ৩ আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালের মাস্টার রোলের কর্মচারী নয়ন আলীকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা একটি নথি সাংবাদিকদের দেখিয়ে দাবি করেন, আগের রাত থেকেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রায়ের অনুলিপি পাওয়া যাচ্ছে। সেটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে বলা হয়েছে। বুধবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ও মুখপাত্র একেএম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে ট্রাইব্যুনাল অনুমান করছেন, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের খসড়ার কিছু অংশ ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকে ফাঁস হয়েছে। ওই দিনই শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ। এরপর চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির অনুসন্ধান শুরু করে ডিবি। অনুসন্ধানে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রমাণ মিলল- ট্রাইব্যুনাল থেকেই রায়ের খসড়া কপি ফাঁস হয়েছে।