দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কমলালেবু একটি জনপ্রিয় সাইট্রাস ফল, যা শুধু স্বাদে নয় বরং পুষ্টিগুণেও ভরপুর। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কমলালেবু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল।

কমলালেবুতে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
# কমলালেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কমলালেবু খেলে ঠান্ডা-কাশি ও ফ্লুর ঝুঁকি কমে যায়।
# এটি হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কমলালেবুর ফ্ল্যাভোনয়েড ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা নিয়মিত সাইট্রাস ফল খান তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
# কমলালেবু হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে। হজমের জন্য এটি প্রাকৃতিক টনিক হিসেবে কাজ করে।
# ত্বক ও সৌন্দর্যে কমলালেবুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়সজনিত বলিরেখা প্রতিরোধ করে এবং ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে। এ কারণে কমলালেবু সৌন্দর্যচর্চায়ও বহুল ব্যবহৃত।
# কমলালেবু হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী। এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড় মজবুত করে। আবার ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়াম দাঁতের গঠন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
# ক্যান্সার প্রতিরোধেও কমলালেবুর ভূমিকা রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা হেসপেরিডিন ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে সাহায্য করে।
# ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও কমলালেবু উপকারী। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় না।
এ ছাড়াও কমলালেবু একটি পূর্ণাঙ্গ পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা, হজম শক্তি উন্নতকরণ, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা থেকে শুরু করে ক্যান্সার প্রতিরোধ পর্যন্ত নানা উপকারে আসে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কমলালেবু রাখা স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org