দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চোখ মানুষের শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। সুস্থ দৃষ্টি আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সহজ করে তোলে।

তবে বর্তমান যুগে মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশনের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে অনেকেই চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চোখের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া, শুষ্কতা, চুলকানি কিংবা অল্প বয়সেই চোখে চশমার প্রয়োজনীয়তা এ সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম। তাই চোখের যত্ন নিতে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা এবং উপকারী খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই।
চোখের বিশ্রাম
চোখের বিশ্রাম জরুরি। দীর্ঘ সময় মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করলে চোখে চাপ পড়ে। তাই কাজের ফাঁকে ‘২০-২০-২০ নিয়ম’ মেনে চলা উচিত। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট কাজ করার পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকাতে হবে। এতে চোখের চাপ কমে।
চোখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
চোখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা দরকার। বাইরে থেকে এসে চোখ ধোয়া উচিত। ময়লা হাত দিয়ে চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ধুলোবালি থেকে চোখ বাঁচাতে সানগ্লাস ব্যবহার করাও ভালো।
চোখের জন্য উপকারী খাবার
চোখের জন্য উপকারী খাবার নিয়মিত খেতে হবে। গাজরে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। পালং শাক, কলমি শাক, কচু শাকের মতো সবুজ শাকেও লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন আছে, যা চোখের জন্য বিশেষ উপকারী। মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়িতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চোখ শুষ্ক হওয়া প্রতিরোধ করে। ডিম, দুধ ও বাদামে ভিটামিন ই, জিঙ্ক ও প্রোটিন থাকে, যা চোখের কোষকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়া কমলা, আমলকি, লেবুর মতো ফলের ভিটামিন সি চোখকে অকাল বয়সজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
ঘুম নিশ্চিত করা
যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করা দরকার। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে চোখ লাল হয়ে যায়, ফোলা ভাব আসে এবং দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম চোখের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
ক্ষতিকর অভ্যাস
ক্ষতিকর অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে। ধূমপান চোখের রেটিনায় ক্ষতি করে এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, ভাজাপোড়া ও তেলচর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
চোখে সামান্য সমস্যাকেও অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করালে প্রাথমিক পর্যায়েই সমস্যার সমাধান করা যায়।
আর তাই বলা যায়, চোখের যত্নে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক অভ্যাস এবং পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য। নিয়মিত যত্ন নিলে চোখ দীর্ঘদিন সুস্থ ও সুন্দর রাখা যায়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org