দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হাঁটা একটি সহজ অথচ কার্যকর ব্যায়াম। এতে বিশেষ কোনো সরঞ্জাম লাগে না এবং বয়স-লিঙ্গ ভেদে নির্বিশেষে সবাই করতে পারে।

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা মনে করেন, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তবে প্রশ্ন হলো- প্রতিদিন আসলে কত সময় হাঁটতে হবে? এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া গেলেও বেশ কিছু বিষয় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। এর মানে হলো, প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট। এতে শরীরে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে, হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪৫ মিনিট হাঁটা হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। যারা নিয়মিত সকালে বা বিকালে হাঁটেন, তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়াও হাঁটা শরীরের বাড়তি ক্যালোরি খরচ করে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে আগ্রহী বা স্থূলতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হাঁটার সময় বাড়ানো দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট দ্রুত হাঁটা শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। আবার বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে হাঁটার সময় ও গতি সমন্বয় করতে হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও হাঁটা অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটলে শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানুষকে প্রশান্তি দেয় ও মানসিক চাপ কমায়। বিশেষত সকালে খোলা বাতাসে হাঁটা মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।
হাঁটার ধরনও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আস্তে আস্তে হাঁটলেই যথেষ্ট নয়; বরং দ্রুত পদক্ষেপে হাঁটলে শরীরের জন্য উপকারিতা বেশি হয়। কেউ চাইলে হাঁটার মাঝে হালকা দৌড় বা সিঁড়ি ওঠা-নামা যুক্ত করতে পারেন। এতে হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে।
আর তাই বলা যায়, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটা একটি সুস্থ জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু শারীরিক সুস্থতাই নয়, মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়। তবে বয়স, শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁটার সময় নির্ধারণ করাই সবচেয়ে ভালো। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুললে দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থেকে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org