দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময় অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে অনেকেই পেটের মেদ সমস্যায় ভুগছেন।

এটি শুধু সৌন্দর্যহানিই করে না, বরং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং হরমোনজনিত জটিলতার ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই পেটের মেদ কমাতে সঠিক ব্যায়ামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এবং লক্ষ্যভিত্তিক ব্যায়াম পেটের অতিরিক্ত চর্বি গলাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কার্ডিও ব্যায়াম পেটের মেদ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর। যেমন- দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, দড়ি লাফ ও সাঁতার। এসব ব্যায়াম শরীরের ক্যালোরি দ্রুত খরচ করে এবং চর্বি কমাতে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট কার্ডিও ব্যায়াম করলে শরীরের মোট চর্বি, বিশেষ করে পেটের মেদ কমতে শুরু করে।
প্ল্যাঙ্ক ব্যায়াম পেটের পেশিকে শক্তিশালী করে এবং মেদ ঝরাতে কার্যকর। প্ল্যাঙ্ক করার সময় পুরো শরীর সোজা রেখে কনুই ও পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে থাকা হয়। নিয়মিত ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট প্ল্যাঙ্ক করলে পেটের মেদ দ্রুত কমতে সাহায্য করে।
সিট-আপ ও ক্রাঞ্চেস পেটের চর্বি পোড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। মেঝেতে শুয়ে হাঁটু বাঁকিয়ে শরীরের ওপরের অংশ উঠানো ও নামানোর মাধ্যমে এই ব্যায়াম করা হয়। এটি পেটের নিচের এবং মাঝের অংশে জমে থাকা চর্বি কমায়।
লেগ রেইজ ব্যায়াম পেটের নিচের অংশের মেদ কমাতে কার্যকর। মেঝেতে শুয়ে পা ধীরে ধীরে ওপরে তোলা এবং নামানোর মাধ্যমে এই ব্যায়াম করা যায়। এটি শুধু মেদ কমায় না, বরং কোমরের পেশিকেও শক্তিশালী করে।
মাউন্টেন ক্লাইম্বার ব্যায়ামও বেশ কার্যকর। এতে শরীরকে পুশ-আপ অবস্থায় রেখে একে একে হাঁটু বুকের দিকে আনা হয়। এটি শরীরের ক্যালোরি দ্রুত খরচ করে এবং পেটের চর্বি কমায়।
যোগব্যায়ামও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভুজঙ্গাসন (কোবরা পোজ), নৌকাসন এবং ধনুরাসনের মতো আসন পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি হজমশক্তি উন্নত করে।
এ ছাড়াও শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না, এর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম বজায় রাখা প্রয়োজন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা, বেশি শাকসবজি ও ফল খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
পেটের মেদ কমানো একদিনে সম্ভব নয়, তবে নিয়মিত এবং সঠিক ব্যায়াম করলে ধীরে ধীরে চর্বি ঝরে যায় এবং শরীর সুস্থ ও ফিট থাকে। তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় ব্যায়ামে বিনিয়োগ করা সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org