দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ টনসিল হলো গলার দুই পাশে অবস্থিত একজোড়া গ্রন্থি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এইটি মুখ এবং নাকের মাধ্যমে প্রবেশ করা জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে। তবে অনেক সময় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে টনসিল ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং ব্যথা বা জ্বালাভাব সৃষ্টি করে। একে টনসিলাইটিস বলা হয়। এই সমস্যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও প্রাপ্তবয়স্কদেরও আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
টনসিলের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- গলা ব্যথা, গিলতে কষ্ট হওয়া, গলার ভেতর ফোলা দেখা যাওয়া, জ্বর, মাথা ব্যথা, কান ব্যথা, এমনকি মুখে দুর্গন্ধ হওয়া। অনেক সময় গলার ভেতরে সাদা বা হলদেটে দাগও দেখা যায়, যা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
টনসিল সমস্যায় প্রথম করণীয় হলো বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রচুর তরল পান করা। গরম পানি, স্যুপ বা লেবু-মধু মিশ্রিত কুসুম গরম পানি গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ঠাণ্ডা খাবার বা আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস, অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি এসব এড়িয়ে চলা জরুরি, কারণ এগুলো প্রদাহ বাড়ায়।
লবণ পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করা (কুলকুচি) টনসিলের ব্যথা এবং সংক্রমণ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক চা চামচ লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে গলার জীবাণু ধ্বংস হয় এবং ফোলা কমে। এছাড়া গলা ব্যথা বাড়লে বা জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল বা উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যেতে পারে।
টনসিল সমস্যা বারবার হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে টনসিল ফুলে গিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা খাবার গিলতে সমস্যা হয়- এমন অবস্থায় সার্জারি বা টনসিল অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে। তবে অপারেশন সাধারণত শেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, যখন অন্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাজ হয় না।
টনসিলের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন জরুরি। যেমন- নিয়মিত হাত ধোয়া, ঠান্ডা আবহাওয়ায় নিজেকে উষ্ণ রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা। এ ছাড়াও সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত গ্লাস, চামচ বা টুথব্রাশ ব্যবহার না করা উচিত।
টনসিলের সমস্যা অবহেলা করা ঠিক নয়। প্রাথমিক যত্ন এবং সচেতনতা অনেক সময়েই বড় ধরনের জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলে টনসিলের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা একেবারেই সম্ভব।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org