দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশে এই পর্যন্ত ৯ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেইসঙ্গে বন্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ও।

যে কারণে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কায় দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। মালাক্কা প্রণালিতে বিরল এক ঝড় সৃষ্টি হওয়ার পরই সপ্তাহখানেক ধরে প্রবল বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মুখে পড়েছে দেশগুলো।
গতকাল রবিবার (৩০ নভেম্বর) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। এই সময় আহত হয়েছেন বহুসংখ্যক ও বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে বাধ্য হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি: ৩৩৪ জনের মৃত্যু
শ্রীলঙ্কায় বন্যা এবং ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে ও নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ২০০ জন। দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ব্যাপক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগও মোকাবিলা করছে। শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া দ্বীপরাষ্ট্রটির পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে; তারপরই সেখানে বন্যা দেখা দেয়। তারপর সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। বন্যায় দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়াতে ৪৩৫ জনের প্রাণহানি
গত রবিবার পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ থাকার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে আটকে রয়েছে বহু মানুষ।
থাইল্যান্ডে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৬২
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যায় ১৬২ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে গত শনিবার দেশটির সরকার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে। এদের অধিকাংশই মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী প্রদেশের বাসিন্দা। সরকারের মুখপাত্র সিরিপং আঙ্কাসাকুলকিয়াত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৭টি প্রদেশে মোট মৃত্যু ১৬২ জনে পৌঁছে গেছে।
ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ আকারে হয়েছে। দেশটিতে বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয় ঘটেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় পেরলিস রাজ্যের বেশ কিছু অংশ এখনও পানির নিচে রয়েছে। ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org