দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং ঠাণ্ডা হাওয়ার কারণে মুখের ত্বকের পাশাপাশি ঠোঁট সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়।

ঠোঁটের ত্বক অত্যন্ত পাতলা এবং সংবেদনশীল হওয়ায় এটি দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফেটে রক্তপাত পর্যন্ত হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে ঠোঁট ফাটা শুধু অস্বস্তিই নয়, সৌন্দর্যহানিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শীত এলেই ঠোঁটের বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি। কিছু সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করলে ঠোঁটকে শুষ্কতা এবং ফাটার যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
# নিয়মিত লিপ বাম ব্যবহার হলো ঠোঁট পরিচর্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বাজারে বিভিন্ন ধরনের লিপ বাম পাওয়া যায়, তবে শীতে বিশেষভাবে বেছে নিতে হবে ময়েশ্চারাইজিং উপাদানসমৃদ্ধ লিপ বাম। শিয়া বাটার, ভ্যাসলিন, নারকেল তেল, অ্যালোভেরা, গ্লিসারিন বা ভিটামিন ই যুক্ত লিপ বাম ঠোঁটকে দীর্ঘক্ষণ নরম ও আর্দ্র রাখে। ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়ার আগেই লিপ বাম লাগানো অভ্যাস করলে ফাটার ঝুঁকি কমে যায়।
# ঠোঁট চাটার অভ্যাস বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকে ঠোঁট শুষ্ক লাগলে জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নেন, কিন্তু এতে ঠোঁট আরও দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। লালারস দ্রুত উবে গিয়ে ঠোঁটকে আগের চেয়ে বেশি রুক্ষ করে তোলে। তাই ঠোঁট চাটার বদলে সঙ্গে লিপ বাম রাখা উচিত।
# পানি পান ঠোঁট সুস্থ রাখার অন্যতম সহজ উপায়। শীতকালে তৃষ্ণা কম লাগায় অনেকে পানি পান কমিয়ে দেন। ফলে দেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, যার প্রভাব সরাসরি পড়ে ঠোঁটের উপর। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে ঠোঁট ভেতর থেকেও আর্দ্র থাকে এবং ফাটে না।
# ঠোঁটে জমে থাকা মৃত কোষ দূর করতে মৃদু স্ক্রাবিং করা যেতে পারে। সপ্তাহে এক বা দুই দিন চিনি ও মধু মিশিয়ে হালকাভাবে ঠোঁটে ঘষলে মৃত কোষ উঠে যায় এবং নতুন কোমল ত্বক বেরিয়ে আসে। তবে স্ক্রাব কখনোই জোরে করা উচিত নয়, কারণ এতে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এ ছাড়াও, ঘরের ভেতরে হিটার বা রুম হিটার ব্যবহার করলে বাতাস আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই সম্ভব হলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা বা ঘরে পানি ভরা একটি পাত্র রেখে দেওয়া যেতে পারে, যা বাতাসে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাসায়নিকযুক্ত লিপস্টিকের ব্যবহার কমানো। অনেক লিপস্টিক ঠোঁটকে অতিরিক্ত শুষ্ক করে। তাই শীতকালে ম্যাট লিপস্টিক এড়িয়ে ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ লিপস্টিক ব্যবহার করা ভালো।
রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য নারকেল তেল, মধু বা ভ্যাসলিন ঠোঁটে লাগালে সারারাত আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং সকালে কোমল ও নরম ঠোঁট পাওয়া যায়।
অতএব, সামান্য যত্ন ও সচেতনতাই পারে এই শীতে ঠোঁটকে ফাটা, রুক্ষ এবং অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে রক্ষা করতে। নিয়মিত পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ঠোঁট থাকবে সবসময়ই সুন্দর, কোমল ও সুস্থ।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org