দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুনতে আসলে কল্প কাহিনীর মতো হলেও কোন কল্প কাহিনী নয়। বাস্তবে নদীর নিচে রয়েছে আরেক নদী! এমন কাহিনীই রয়েছে আপনাদের জন্য।
সম্প্রতি ব্রাজিলবাসী এক ভারতীয় সন্তান বালিয়া মন্নথল হামজা এবং তার সঙ্গীরা তেলের কুয়োয় সন্ধান চালিয়ে খোঁজ পেয়েছেন মাটির নিচে পড়ে থাকা একটি জগতের। না, কোনো শহর নয়। একটি নদী। আশ্চর্য হওয়ার মতো কাহিনী। প্রকৃতির এক আশ্চর্য খেলা এটি। আমাজন নদীর নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে আরও একটি দীর্ঘ নদী। হামজাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এই নদীর নামকরণ হয়েছে রিও হামজা। এটি পৃথিবীর প্রথম অন্তঃসলিলা নদী নয়।
আমরা সকলেই জানি আমাজন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। তার তিন-চতুর্থাংশই পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বয়ে চলেছে ব্রাজিলের মধ্য দিয়ে। জানা যায়, সম্প্রতি হামজা এবং তার সঙ্গীরা ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ দ্য সোসাইটি ব্রাজিলিয়েরা জিওফিজিকাল ইন রিও ডি জেনেইরো-এ এই আবিষ্কার সম্পর্কে বক্তব্য রেখে বলেছেন, আমাজনের মতোই পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বয়ে চলেছে রিও হামজা।
কিভাবে পাওয়া গেলো সে নদী
আমাজন অববাহিকায় তেল খুঁজতে পেট্রোবা নামের একটি সংস্থা ২৪১টি কুয়ো খুঁড়েছিল সাত ও আটের দশকে। সেখান থেকে এখন আর তেল তোলা হয় না। অব্যবহৃত কুয়োগুলোর মধ্যে তাপমাত্রার হেরফের লক্ষ করেন বিজ্ঞানীরা। তখনই তাদের খটকা লাগে। ব্রাজিল ন্যাশনাল অবজারভেটরির পক্ষে অনুসন্ধান চালান কেরলের বালিয়া মন্নথল হামজা এবং এলিজাবেথ ট্রাভারেস পাইমেন্টেল।
ওই অনুসন্ধানের সুবিধের জন্য বিশেষ ধরনের একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেন তারা, যার সাহায্যে হদিস মেলে পাতালপ্রবাহী এই নদীটির। পাইমেন্টেল জানিয়েছেন যে, আন্দেজ থেকে শুরু হয়ে হামজা নদী বয়ে চলেছে পাথরের খাঁজ দিয়ে ২,০০০ মিটার নিচে মাটির তলায়। এরপর গতিপথ বদলে ভূ-পৃষ্ঠের অনেক নিচ দিয়ে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। দৈর্ঘ্যে আমাজনের মতো ৬,০০০ কিলোমিটার হলেও প্রস্থে আমাজনের চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার। এ কারণেই নদীর গতি আমাজনের মতো নয়। আমাজনের গতি প্রত্যেক সেকেন্ডে প্রায় পাঁচ মিটার, কিন্তু ঘণ্টায় মাত্র কয়েক মিলিমিটার হামজার গতি।
মনে করা হচ্ছে, এত ধীরে প্রবাহিত নদীকে আদতেও নদী বলা যায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা হার মানতে নারাজ। রিও হামজাকে নিয়ে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। গবেষণা শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যেই নদীটির সম্পূর্ণ অস্তিত্ব উদ্ধার করতে পারবেন বলে আশা করছেন হামজারা।
দীর্ঘ ৪ দশক ধরে হামজা গবেষণা চালাচ্ছেন এই অঞ্চলে। আমাজনের মোহনায় সমুদ্রের জলে লবণের মাত্রা কেন কম এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহু দিন ধরেই ধোঁয়াশায় ছিলেন। সবার আড়ালে রিও হামজাই যুগে-যুগে কাজ করে চলেছে। আমাজনের প্রকৃতির ওপরও প্রভাব রয়েছে এই রিও হামজার। ঘটনা যায়ই হোক। গবেষকরা এখন আদা-জল খেয়ে লেগেছেন এই নদীর নিচের নদীর প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য। এক সময় হয়তো সব তথ্য পাওয়া যাবেও- তবে কতদিনে তার কোন ঠিক-ঠিকানা এখনও কেও জানে না।
তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর