দি ঢাকা টাইমস্ বিনোদন ডেস্ক ॥ সেনা অভ্যুত্থানের কোন সম্ভাবনা নাই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
জয় তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এমন কোন জেনারেল বা সেনা কর্মকর্তা নেই যার বা যাদের সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর ইচ্ছা আছে। সফল একটি অভ্যুত্থান ঘটাতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছতে হবে। কিন্তু গণভবনে যে প্রহরীরা রয়েছেন তারা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত। তারা কাউকে গণভবনে প্রবেশ করতে দেবেন না। এছাড়া যে কোন সামরিক অভ্যুত্থানে ব্যাপক রক্তপাত হয়। তাই আমি মনে করি এমন কোন সেনা কর্মকর্তার দল নেই যারা এমন ঝুঁকি নেবেন। সেনাবাহিনীর কাছে শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। তাদের ক্ষমতা পেতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে’। কলকাতার প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। জয়ের এই সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রভাবশালী ওই পত্রিকার পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেবদ্বিপ পুরোহিত। গতকাল প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল- বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে যে, সেনাবাহিনী এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসন করেছেন সেনাশাসকরা। এরপর ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেছে সেনা-সমর্থিত সরকার।
এমন প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমাদের সমাজের বেসামরিক একটি অংশ ক্ষমতা চায়। কিন্তু তারা কখনও নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারে না। তাদের ক্ষমতায় আসার একমাত্র পথ সেনাবাহিনীর সমর্থন। তারাই এখন সেনা হস্তক্ষেপের কথা বলছে। কিন্তু আমি আপনাকে বলতে পারি এদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। আমাদের সরকারের সফলতা এত বেশি যে, জনগণ বৈধ একটি সরকারের বিপরীতে কোন হস্তক্ষেপ সমর্থন করবে না। এ সরকার একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে।
ওই সাক্ষাৎকারে উঠে আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ। প্রশ্ন করা হয় বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। প্রশ্ন করা হয় হয়: ১১ নভেম্বর হরতাল শুরুর আগেই বিরোধী দল বিএনপির ৫ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এই দমনপীড়ন নিয়ে এরই মধ্যে বিতর্ক উঠেছে। বলা হচ্ছে, সরকার বিরোধী দল ও সুশীল সমাজের ভিন্নমতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
এ প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, বিরোধী দল প্রথমে আওয়ামী লীগকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল যাতে নির্বাচন না হয় এবং তারপর তারা লোকজনকে ভীতসন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, সরকার জনগণকে রক্ষা করেছে। গত হরতালে আমরা সহিংসতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ঘেরাও দিয়ে আমরা বিএনপির সমর্থকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছি।
হরতালের প্রসঙ্গ টেনে জয় বলেন, হরতাল ভাল নয়। কোন কারণে হরতাল দেয়া হবে? এর কোন যৌক্তিক কারণ নেই। আমরা ৬০০০ স্থানীয় নির্বাচন করেছি। তা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। বিএনপির সময়ে তা হয়নি। নির্বাচনী প্রচারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনী প্রচারণায় গতি আনছি। শিগগিরই আমাদের বিলবোর্ড প্রচারণা শুরু হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, বিএনপি যদি কোনভাবে, অলৌকিকভাবে, ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়ে দেবেন তার ছেলে তারেক রহমানকে।
ওই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এই সাক্ষাৎকার প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, সামপ্রতিক সময়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গোপন বৈঠকের খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সেই কাহিনীর রেশ কাটতে না কাটতেই আবার দ্য টেলিগ্রাফের নিউজটি জনসমক্ষে উপস্থিত হলো।