দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘাতে মদদদাতাদের বিচারের পরোক্ষ হুমকি দিলো জাতিসংঘ। সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দও উদ্বিগ্ন।
জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই গতকাল রবিবার জেনেভায় বাংলাদেশ নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ধ্বংসের রাজনীতি বাংলাদেশকে বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রোম স্ট্যাটিউটের রাষ্ট্রপক্ষ। বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘অন্যান্য স্থানে আমরা দেখেছি এ ধরনের রাজনৈতিক বা নির্বাচন সম্পর্কিত সংঘাত যেখানে যেখানে হয়েছে সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংঘাতে দদদাতাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।’
নাভি পিল্লাইয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দলগুলো তাদের মতপার্থক্য নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক সংঘাতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উভয় দলের সমর্থকরা পরস্পর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিহত, কয়েক শ’ আহত হওয়ার পাশাপাশি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। হাইকমিশনার বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা চরম তৎপরতা দেখেছি। বিক্ষোভকারীরা গণপরিবহনে পেট্রোল বোমা ছুড়েছে। সে সময় গণপরিবহনে অবস্থানরতদের বের হওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর ফলে নারী ও শিশুরা ভয়ংকরভাবে পুড়েছে।’
নাভি পিল্লাইয়ের বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘এ ধরনের সংঘাত বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বাংলাদেশের জনগণের বড় অংশই সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় এবং এটি তাদের প্রাপ্য।’ হাইকমিশনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দ্বারা শীর্ষ বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার ও আটকের নিন্দাও জানান।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের এ বক্তব্য বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাতে মদদদাতাদের বিচারের হুমকি হিসেবে দেখা ঠিক হবে কি না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘এটি পরোক্ষভাবে একটি হুমকি। তবে বাংলাদেশ পরিস্থিতি যদি কেনিয়ার মতো বিবেচনা করা হয় তা হলে তা দুঃখজনক’। তিনি বলেন, ওই বিবৃতির বিষয়ে আরো ব্যাখ্যা ও আলোচনা প্রয়োজন। তা ছাড়া সংঘাত কে ঘটাচ্ছে তাও জাতিসংঘের বিবেচনায় নিতে হবে।
এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে এটাই মনে করিয়ে দেওয়া যে, এই দেশ জাতিসংঘের যেসব সনদ স্বাক্ষর করেছে তা মেনে চলা উচিত। পাশাপাশি এও মনে করিয়ে দেওয়া যে, বিশ্বায়নের যুগে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে আছে। বাংলাদেশ তো আর ইরান বা উত্তর কোরিয়ার মতো কোনো দেশ নয়।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ও তো বিরক্ত হয়ে গেছে। ওরা আর কত সহ্য করবে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন একাধিকবার চিঠি লিখেছেন, ফোন করেছেন। এভাবে কয়টি দেশে তিনি এটি করেনতিনি বলেন, যেখানে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে সেখানে নিজ দেশেই শান্তি নাই। রাস্তাঘাটে মানুষ মারা যাচ্ছে, আগুনে পুড়ছে। এই যে গত কয়েকদিনে প্রায় ৩০ জন মারা গেল। এটি কি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী দেশের জন্য লজ্জাজনক নয় বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উভয় দলের সমর্থকরা পরস্পর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে। উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিহত, কয়েক শ আহত হওয়ার পাশাপাশি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।হাইকমিশনার বলেন, ুগত সপ্তাহে আমরা চরম তৎপরতা দেখেছি। বিক্ষোভকারীরা গণপরিবহনে ‘মলোটোভ ককটেল’ (পেট্রোল বোমা) ছুড়েছে। সে সময় গণপরিবহনে (বাসে) অবস্থানরতদের বের হওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর ফলে নারী ও শিশুরা ভয়ংকরভাবে পুড়েছে।চতিনি বলেন, ‘এ ধরনের সংঘাত বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বাংলাদেশের জনগণের বড় অংশই সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় এবং এটি তাদের প্রাপ্য।্থহাইকমিশনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দ্বারা শীর্ষ বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার ও আটকেরও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘এটি পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করতে পারে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ করে দিতে পারে।্থনাভি পিলস্নাই বলেন, মতপার্থক্য যাই হোক না কেন, উভয় পক্ষের নেতাদের অবশ্যই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থামানো উচিত। এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে বিপজ্জনকভাবে বড় সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।তিনি বলেন, অবিলম্বে সংঘাত থামাতে তাদের (রাজনীতিকদের) দায়িত্ব পালন ও প্রভাব বিস্তার করা উচিত। এর পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।