দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত হয়েছে আগেই। কিন্তু কক্ষপথ আর টাকার সমস্যা প্রধান অন্তরায় ছিল। সম্প্রতি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের খরচ যোগাতে ৬ টি বিদেশী ব্যাংক এবং অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। কক্ষপথ সমস্যার সমাধানেও কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বপ্রথম আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিম ব্যাংক। এটি অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল গত বছরের শুরুতে। পরে এইচএসবিসি ফ্রান্স, জাপান ব্যাংক অব ইন্টারন্যাশনাল, সিডব্লিউজি গালফ ইন্টারন্যাশনাল অব ইউকে এবং চায়না গ্রেটওয়াল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দেয়।
প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় আবার এই প্রস্তাব গুলো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠিয়েছে। তারা প্রস্তাব গুলো যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
২০১১ সালে একনেকের বৈঠকে এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এর মেয়াদ ২০১৬ জুন মাস পর্যন্ত।
স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা বিদেশী সহায়তা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে, যা প্রস্তাব দেওয়া ছয়টি প্রতিষ্ঠানের যেকোনো একটি থেকে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আগামী তিন বছর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আনুষাঙ্গিক খরচ মেটাবে বিটিআরসি। এজন্য তাদের খরচ করতে হবে বাকি ১ হাজার ৫৬০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে কক্ষপথ নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। এটি নিরসনে জাতিসংঘের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কক্ষপথ নির্ধারক কর্তৃপক্ষ- জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)-এর কাছে আবেদন করেছিল বিটিআরসি। বঙ্গবন্ধু-১ এর জন্য বাংলাদেশ চেয়েছে ১০২ ডিগ্রি পূর্বের কক্ষপথ। কিন্তু স্যাটেলাইটে ফ্রিকোয়েন্সি পেতে সমস্যা তৈরি হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়া মহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ আপত্তি জানায়।
বর্তমানে আইটিইউতে ২৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছে। আইটিইউ’র কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব একটু বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
এরপর ১১৯ ডিগ্রি পূর্ব কক্ষপথটি রাশিয়ার স্পুটনিকের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। প্রয়োজনে আরও ১৫ বছরের জন্য কেনার সুযোগ থাকছে। এছাড়া ৬৯ ডিগ্রি পূর্ব এবং ১৩৫ ডিগ্রি পূর্ব কক্ষপথ দুটির জন্যও আবেদন করা হয়েছে।
বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশকে ১১ মিলিয়ন ডলার ভাড়া দিতে হয়। স্যাটেলাইট চালু করতে পারলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয়ই হবে না, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ আয় করা যাবে। এখন দেখা যাক, কবে উড়বে আমাদের স্বপ্নের স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১।