ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ দেশের পোলট্রি খাত রক্ষায় বার্ড ফ্লুর টিকা আমদানি করা হচ্ছে। দেশে বার্ড ফ্লুর কারণে পোলট্রি খাতে ধ্বস নামার কারণে এ পর্যন্ত ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই শিল্পকে রক্ষার জন্যই বার্ড ফ্লু তথা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা আমদানি করা হবে।
প্রকাশ থাকে যে, বিগত কয়েক বছর লাগাতারভাবে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সাম্প্রতিক সময়ের এই ভাইরাসের সংক্রমণে পোলট্রি খাতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টিকা আমদানি করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে সংক্রমিত পোলট্রি খামারে এসব টিকা দেয়া হবে। তিন ধরনের টিকা আনা হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে আগামী সপ্তাহে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে বার্ড ফ্লু রোধে যেসব টিকা দেয়া হতো তা আসত চোরাই পথে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস জানান, টিকা আমদানির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো এসব টিকা আমদানি করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এসব টিকা প্রয়োগ করার প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি জানান, এসব টিকার প্রভাব যাতে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর না পড়ে, সেজন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এসব টিকার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্ড-ফ্লু’র জীবাণু যে কোন সময় তার প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারে। তাই টিকা ব্যবহারের আগে জীবাণুর টাইপ অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে। তা না হলে টিকা ব্যবহার করেও সুফল পাওয়া যাবে না। যেসব দেশ টিকা ব্যবহার করে সফল হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা ও কৌশলকে কাজে লাগানোর পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে সাভারের বিমানের পোলট্রি খামারে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে এ জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দিলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ওয়েবপেজে দেয়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) লিংকে ২০১২ সালে মাত্র ২১টি বাণিজ্যিক খামারে হাইলি প্যাথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। এফএও’র তথ্য মতে, ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৪৯৩টি বাণিজ্যিক এবং ৫৭টি ব্যাকইয়ার্ড ফার্মসহ মোট ৫৫০টি খামারে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণের খবর রয়েছে। বেসরকারি হিসাব মতে শুধু ২০০৭-২০০৮ সালের সংক্রমণেই প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং চলতি বছর পর্যন্ত এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাত হাজার কোটি টাকা।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) দাবি অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে ৫০ ভাগেরও বেশি লেয়ার ফার্ম, ৭০ ভাগ ব্রিডার ফার্ম ও হ্যাচারি এবং ৪৫ ভাগ ব্রয়লার ফার্ম বন্ধ হয়ে যায়। ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার প্যারেন্টস্টকের (পিএস) মধ্যে প্রায় ২০ লাখের অধিক পিএস এবং ৫০ শতাংশের অধিক ডিম পাড়া মুরগি মারা যায়। একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার উৎপাদনও অর্ধেকে নেমে আসে। এর ফলে বাজারে ডিম ও মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।