দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন একটি খবর পত্র-পত্রিকায় দেখে বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ একটু বিস্মিত তো হতেই পারেন। তবে ঘটনাটি সত্যি। অবরোধের কারণে বিয়ের তারিখ যাতে পেছাতে না হয় তারজন্য হেলিকপ্টারে গিয়ে বিয়ে করলেন বগুড়ার এক ব্যক্তি।
হরতাল-অবরোধে বিয়ে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকেই। দিনক্ষণ ঠিক থাকছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে কনে পক্ষকে। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মালম্বীদের লগ্নভ্রষ্ট হওয়াকে একেবারেই অন্যচোখে দেখা হয়। লগ্নভ্রষ্ট হবে এ কারণেই কনে পক্ষ হেলিকপ্টার ভাড়া করে বরকে নিয়ে যাচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে। আবার বিয়েগুলো যেন তড়িঘড়ি করে স্বল্প আয়োজনে সারা হচ্ছে এমন ঘটনাও ঘটছে। আবার ইচ্ছা থাকলেও কাছের আত্মীয়-স্বজনের অনেকেই নিমন্ত্রণ জানানোও বা নিমন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
সাধারণত শুক্রবারে কোন হরতাল-অবরোধ থাকে না। তাই হরতাল-অবরোধে যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য শুক্রবার নির্ধারণ করা হয় বিয়ে। আর তাই বগুড়া শহরের মধ্যচেলোপাড়ার নয়ন চন্দ্র সরকারের বিয়ের দিনক্ষণ ধার্য ছিল শুক্রবার। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় শুক্রবার বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। কনের বাড়ি ঢাকাতে হওয়ায় সড়ক পথে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা ছিল না। লগ্নভ্রষ্ট হবে এমন আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে কনে পক্ষ মেয়ের বিয়ের জন্য হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দেয় বগুড়ায়। বিকালে সেই হেলিকপ্টারযোগে বর পৌঁছে কনে বাড়িতে। কনে পক্ষকে এজন্য অতিরিক্ত টাকাও গুনতে হয়েছে হেলিকপ্টার ভাড়া দিতে।
এমন আরও অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান পেছানো হচ্ছে হরতাল-অবরোধের কারণে। বগুড়া শহরের কলোনি এলাকার মিডিয়া কর্মী ফারজানা তানিয়ার বিয়ের দিনক্ষণ ধার্য ছিল দু’মাস আগে থেকেই। সে অনুযায়ী ১৮ই ডিসেম্বর তার বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা এবং হরতাল-অবরোধের কারণে নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করে ১৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে। কনে ও বর পক্ষের আশঙ্কা রাজনৈতিক অবস্থা এমনই, যদি ১৬ ডিসেম্বরের পরে আবারও কোন হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি আসে, তাই তারিখ পরিবর্তন করে এগিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বিয়ের আয়োজন অনেক বড় করে করার কথা থাকলেও স্বল্প সময়ের কারণে তা সম্ভব হয়নি। রাস্তায় যাতে সন্ধ্যার পর কোন অঘটনের শিকার হতে না হয়, সেজন্য দুপুরের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন করে বরযাত্রীরা চলে যাবেন।
আবার হরতাল-অবরোধের কারণে অনেকেই আত্মীয়-স্বজনদের বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি এমন ঘটনাও ঘটছে। শুধু যে অর্থনীতি ধ্বংস করছে তা নয়, মানুষের জীবন-জীবিকা, পারিবারিক আচার-অনুষ্ঠান সবকিছুতেই হরতাল-অবরোধ এক বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এসব ঘটনায় তার সাক্ষী।