দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কিশোরগঞ্জের ব্যাংক লুটের ঘটনার মূল হোতা হাবিব ওরফে সোহেলের স্ত্রী মাহিমা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সে আগে থেকেই জানতো ব্যাংক লুটের ঘটনা। অপরদিকে যে ট্রাকে টাকা বহন করা হয়েছিল সেই হেলপারসহ সেই ট্রাকটি আটক করেছে পুলিশ।
পরশু রাতে গ্রেফতার হওয়া সোহেলের স্ত্রী মাহিমাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে সোহেলের স্ত্রী মাহিমা। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সব কিছু প্রকাশ করছে না। পুলিশ বলেছে, মাহিমা আগে থেকেই জানতো ব্যাংক লুটের ঘটনা। বিভিন্ন সময় মাহিমার সঙ্গে শলা-পরামর্শ করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৭ সালে সোহেলের সঙ্গে বিয়ে হয় মাহিমার। ২৫ বছর বয়সী মাহিমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরেই ঘটে বিয়ের ঘটনা। তবে দু’জনের এ বিয়ের বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানতো না মাহিমার পরিবার। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পরই সোহেলের প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়ে মাহিমা। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই পরিবারের কাছে একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে মাহিমার। কিন্তু বিয়েতে মত পাওয়া যেতো না তার। গোপন বিয়ের বিষয়টি সব সময় কৌশলে এড়িয়ে গেলেও এক সময় ধরা পড়ে যায় সবার কাছে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে পরিবারকে জানিয়ে দেন, হাবীব নামের এক তরুণের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। এমন অবস্থায় মাহিমার সুখের কথা ভেবে পরিবারের লোকজনও মেনেও নেন তাদের বিয়ে।
মাহিমার ভবিষ্যৎ সুখের আশায় চেষ্টা-তদ্বির এবং সহযোগিতার মাধ্যমে পারিবারিক উদ্যোগে হাবিব ওরফে সোহেলকে পাঠানো হয় দুবাই। কিন্তু সেই সুখ অধরাই থেকে যায় মাহিমার জীবনে। স্বামী দুবাই থেকে কিছু টাকা জমিয়ে দেশে ফিরলেও সেটি কিছুদিনেই শেষ হয়ে যায়। প্রকট দরিদ্রতার জন্য বিবাহিত জীবনের সাত বছরেও তারা চিন্তা করতে পারেনি সন্তান নেয়ার কথা। কিন্তু মাহিমার কাছে বরাবরই অজানা ছিল হাবীব পরিচয়ের আড়ালে ইউসুফ মুন্সীর আগের বিয়ে এবং সন্তান থাকার বিষয়টিও। এমনকি স্ত্রী মাহিমার কাছে ব্যাংক লুটের পরিকল্পনার কথাও প্রথমে গোপন রেখেছিল সোহেল। ব্যাংক লুটের ২ সপ্তাহ আগে স্বামীর দুর্র্ধষ এই পরিকল্পনার কথা জানতে পারে মাহিমা।
সোহেল তাকে জানায়, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা নিয়ে দু’জনে মিলে ঢাকায় গিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। এমন অভিপ্রায়ে সচ্ছলতার স্বপ্নে বিভোর দারিদ্র্যক্লিষ্ট মাহিমা ঘটনার ৭/৮ দিন আগে পাকুন্দিয়ার চিলাকাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঢাকায় যাওয়ার বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে আসে। তখনও তার পরিবারের লোকজন জানতো না- কি এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে হাবিব ওরফে সোহেল। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আটকের পর সোহেলের স্ত্রী মাহিমা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে সে এসব তথ্য দিয়েছে।
সেই ট্রাকটি আটক করেছে পুলিশ
গতকাল বিকাল ৫টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার আঠারবাড়ি উপজেলার তেলোয়াড়ি মাদ্রাসা মাঠ থেকে ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো ট-১৬-৮৪৬৮) আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় ট্রাকটির হেলপার আলমগীর (৩০) পুলিশের হাতে আটক হয়। এর আগে ২২২ বস্তা চাল যে কাভার্ড ভ্যানে করে সোহেল রাজধানীর শ্যামপুর থেকে আটরশির দরবার শরীফে পাঠিয়েছিল সেটিকেও আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে চালক আবদুস সাত্তার (৬৪) ও হেলপার সেলামত (৫২) সহ কাভার্ড ভ্যানটি (ঢাকা মেট্রো ট-১৬-৯৪৩০) আটক করে পুলিশ।