দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ইনস্টিটিউট অব মেরিন সাইন্সেস এন্ড ফিশারীজ বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের পানি পান যোগ্য করে তোলার বিষয়ে গবেষণা চালান এবং একটি সফল যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
পৃথিবীর ৯৯% পানি পানের অযোগ্য এবং মাত্র ১ ভাগ পানি পান যোগ্য। এই ৯৯ শতাংশ পান অযোগ্য পানির মাঝে বিশাল অংশ জুড়ে আছে সমুদ্রের পানি। সমুদ্রের পানিকে স্যালাইন পানিও বলা হয় কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম লবণ। সমুদ্রের পানিতে লবনের পরিমাণ বেশি থাকাতে মানুষের পক্ষে এই পানি পান করা অসম্ভব। তবে আমাদের পৃথিবীতে যে সামান্য পরিমাণ পানি পানের যোগ্য আছে তাঁর পরিমাণও দিন দিন কমে আসছে কারণ নানান দূষণ! ফলে আমাদের খুব দ্রুত বিকল্প উপায় খুঁজে নিতে হবে। সারা বিশ্বে বর্তমানে সমুদ্রের পানি পান যোগ্য করার বিষয়ে গবেষণা চালানো হচ্ছে এতে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশে সমুদ্রের পানিকে মানুষের পান যোগ্য করে তোলার বিষয়ে গবেষণা চলছে অনেক আগে থেকেই। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ইনস্টিটিউট অব মেরিন সাইন্সেস এন্ড ফিশারীজের বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের পানি পান যোগ্য করে তোলার বিষয়ে গবেষণা চালান এবং একটি সফল যন্ত্রও আবিষ্কার করেন। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চালানো এই গবেষণা সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে পরিচালিত হয়। সম্পূর্ণ প্রকল্পে অংশ নেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সাইন্সেস এন্ড ফিশারীজের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ মহিদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইমরান হোসেন এবং একই বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক শেইখ আফতাব উদ্দীন।
SEA WATER DESALINATION UNIT THROUGH SOLAR POWER নামের এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ পরিচালিত হয় কক্সবাজারে। প্রকল্পে তিন ধরণের সোলার স্টিল এর মাধ্যমে দীর্ঘ গবেষণার পরে একটি বিশেষ যন্ত্র আবিষ্কার করা হয় যা দিয়ে উপকূলবর্তী মানুষ সমুদ্রের পানিকে পান যোগ্য করে তুলতে পারবেন। গবেষকদের দাবি তাদের উদ্ভাবণ করা যন্ত্র তৈরিতে খরচ হবে মাত্র ২৮৫০ টাকা এবং এটি বারংবার ব্যবহার উপযোগী একটি যন্ত্র।
যেভাবে কাজ করবে এই যন্ত্রঃ
এই যন্ত্রের কার্যপ্রণালী অত্যন্ত সহজ। সাধারণ একটি সোলার ষ্টীল কিনে তা একটি চার কোনা খোলা পাত্রের তলানিতে বিশেষ কোণে বসাতে হবে যাতে কোন পানি গড়িয়ে না পড়ে। এবার সম্পূর্ণ পাত্রে সমুদ্রের জল ঢেলে তার উপরে কাঁচের প্লেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সূর্যরশ্মি কাঁচের ভেতর দিয়ে সোলার প্লেটে গিয়ে পড়বে এবং প্লেট সূর্যের তাপে গরম হবে। এতে প্লেটে থাকা পানি সূর্যের তাপে অভিস্রবণ হয়ে কাঁচের নিচের স্থরে বিন্দু বিন্দু জমা হবে। এভাবে বিন্দু বিন্দু শুদ্ধ খাবার পানি জমে এক সাথে কাঁচ গড়িয়ে সাথে থাকা পাত্রে এসে জমা হবে। সূর্যের তাপে তৈরি হওয়া এ পানি পান যোগ্য এবং এতে কোন ব্যাকটেরিয়া জীবাণু থাকেনা।
পৃথিবীর নানান দেশ সমুদ্রের পানিকে ব্যবহার এবং পানযোগ্য করে তোলার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। দিন দিন যেভাবে ভূগর্ভস্থ পানযোগ্য মিষ্টি পানির স্থর নিচে নেমে যাচ্ছে এতে করে নিশ্চিত করে বলা যায় আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশ সহ বিশ্ব তীব্র পান যোগ্য পানি সংকটে পড়বে। এখন সময় এসেছে সুমুদ্রের বিশাল পরিমাণ লবণাক্ত জল কিভাবে পানযোগ্য করে তোলা যায় সেই বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার। বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণ দেশীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত এসব যন্ত্র এবং গবেষকদের সরকারি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে বাংলাদেশের মানুষদের ভবিষ্যতে পানীয় জলের সংকট মোকাবেলায় বিপদের সম্মুখীন হতে হবেনা।
এর আগে দি ঢাকা টাইমসে প্রকাশিত শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের তৈরি সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্র আবিষ্কারের প্রতিবেদন পড়তে এখানে ক্লিক করুন।