দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যেকোনো দিবসকে সামনে রেখে সবার নিশ্চয় প্রিয় জনকে সাথে নিয়ে বেড়ানোর পরিকল্পনা আছে? আজ আমরা আপনাদের বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্রগ্রাম এবং সিলেট শহরের কিছু দর্শনীয় স্পটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
বাংলাদেশ অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দেশ। তবে এটা ঠিক শহরের ইট কাঠের দেয়ালের মধ্যে থেকে বাংলাদেশের অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক রূপ উপভোগ করাটা অনেকটাই দুর্লভ কাজ। তবে এখনো দেশের প্রধান তিন শহর ঢাকা, চট্রগ্রাম এবং সিলেটে রয়েছে বেশ কিছু প্রাকৃতিক এবং আধুনিক বেড়ানোর স্পট। আজ আমাদের এই প্রতিবেদনের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে আপনাদের নিজ নিজ শহরের আশেপাশে ঘুরে দেখার কিছু স্পটের বিষয়ে ধারণা দেয়া। চলুন জেনে নিই প্রিয় মানুষকে নিয়ে কোথায় কোথায় বেড়ানো যায় আসছে ভেলেন্টাইনস ডে অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসে।
ঢাকা
ঢাকা দেশের রাজধানী, ঢাকায় রয়েছে বেশ কিছু বিনোদন পার্ক এবং প্রাকৃতিক স্পট। তবে সব কয়টি স্পটে যাওয়া আসা এতো সহজ নয়। আপনি যদি হাতে সময় নিয়ে বেড়াতে চান তবে ঢাকায় ঘুরে বেড়ানোর অনেক জায়গাই রয়েছে আর যদি হাতে সময় কম থাকে তবে ঢাকার আসে-পাশে কিছু নিরিবিরি এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
১) পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারসহ সমস্ত পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পুরনো ভবন, তারা মাসজিদ, গোল তালাব, রোজ গার্ডেন, শাংখানিধি হাউজ আরও অনেক কিছু।
২) যেতে পারেন ঐতিহাসিক লালবাগ এর কেল্লায় কিংবা করতে পারেন বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ভ্রমণ!
৩) যদিও একটি রাস্তা হাতিরঝিল তাও সেখানে ঘুরে আসতে পারেন, রয়েছে দর্শনীয় হ্রদ এবং পুল।
৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো ভালোবাসা দিবসে অনেকটাই প্রেমিক-প্রেমিকার দখলে চলে যায়। সেখানে আপনি শাহবাগ, টিএসসি সহ জাতীয় কবির সমাধি ঘুরে দেখতে পারেন।
৫) আরও দেখতে পারেন আহসান মঞ্জিল, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, নভো থিয়েটার, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, শাহবাগ জাদুঘর, কার্জন হল, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, ধানমন্ডি লেক, সামরিক জাদুঘর, সাভার স্মৃতিসৌধ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, হানিফ ফ্লাইওভার, রোজ গার্ডেন, সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান, শহীদ মিনার, তারা মসজিদ ইত্যাদি।
এবার চলুন জেনে নেয়া যাক ঢাকার ভেতরের সবচেয়ে পরিচিত কিছু যায়গার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যঃ
- ঢাকা চিড়িয়াখানা, মিরপুর-১
সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রোববার তবে যদি রবিবার কোন সরকারি ছুটি থাকে তাহলে রবিবারেও ঢাকা চিড়িয়াখানা খোলা থাকে। বাদবাকি সোম থেকে শনিবার সারা বছর খোলা থাকে। গেইট বন্ধ ও খোলার সময়- সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা।
প্রবেশমূল্য: ১০ টাকা।
যোগাযোগ- ৮০৩৫০৩৫।
- ঢাকা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন), মিরপুর
গেইট বন্ধ এবং খোলার সময়- বোটানিক্যাল গার্ডেন সপ্তহে প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা (মার্চ থেকে নভেম্বর)
প্রবেশ মূল্য: পাঁচ টাকা। শিশুদের জন্য বিশেষ দুই টাকা।
যোগাযোগ- ৮০৩৩২৯২।
- ঢাকা জাতীয় শিশুপার্ক, শাহবাগ
সাপ্তাহিক বন্ধ: রোববার বন্ধ থাকে এবং বুধবার শুধু দুস্থ ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য খোলা থাকে। বুধবার ছাড়া সোম থেকে শনিবার খোলা দুপুর একটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা (অক্টোবর-মার্চ); বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)।
প্রবেশ মূল্য: জনপ্রতি আট টাকা।
যোগাযোগ- ৮৬২৩৩০৪
- বলধা গার্ডেন, ওয়ারী
প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা।
প্রবেশ মূল্য: পাঁচ টাকা। অনূর্ধ্ব ১০ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রবেশ মূল্য দুই টাকা। আর শিক্ষাসফরে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য তিন টাকা।
- জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ
সাপ্তাহিক বন্ধঃ প্রতি বৃহস্পতিবার এছাড়া সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। শুক্রবার খোলা থাকে বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা।
যোগাযোগ- ৮৬১৯৩৯৬-৯৯
- আহসান মঞ্জিল জাদুঘর
সাপ্তাহিক বন্ধঃ বৃহস্পতিবার এছাড়া সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। শুক্রবার খোলা থাকে বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।
যোগাযোগ- ৭৩৯১১২২
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, ধানমন্ডি
সাপ্তাহিক বন্ধঃ প্রতি বুধবার বন্ধ থাকে এবং সরকারি সকল ছুটির দিন খোলা থাকে।। অন্য দিনগুলোতে খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
যোগাযোগ- ৮১১০০৪৬
- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেগুনবাগিচা
সাপ্তাহিক বন্ধঃ রোববার। সোম থেকে শনিবার খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা।
যোগাযোগ- ৯৫৫৯০৯১-২
- শিশু একাডেমী জাদুঘর
সাপ্তাহিক বন্ধঃ শুক্র ও শনিবার বন্ধ এবং সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। রবি থেকে বৃহস্পতিবার খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
যোগাযোগ- ৯৫৫৮৮৭৪
- জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও
সাপ্তাহিক বন্ধঃ বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্ধ এবং সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। শনি থেকে বুধবার খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি পাঁচ টাকা।
যোগাযোগ- ৯১১২০৮৪
- সামরিক জাদুঘর, বিজয় সরণি
সাপ্তাহিক বন্ধঃ বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্ধ থাকে এবং সরকারি ছুটি ও সেনাবাহিনীর ঐচ্ছিক ছুটির সময় বন্ধ থাকে। সব সময় শনি থেকে বুধবার খোলা থাকে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত।
যোগাযোগ- সেনানিবাস এক্সচেঞ্জ- ৮৭৫০০১১ (এক্সটেনশন-৭৫৪২)
- লালবাগ কেল্লা, লালবাগ
সাপ্তাহিক বন্ধঃ রোববার বন্ধ থাকে এবং সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে।। সোমবার খোলা থাকে বেলা দেড়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। মঙ্গল থেকে শনিবার খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
প্রবেশমূল্যঃ জনপ্রতি ১০ টাকা; তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৫০ টাকা।
যোগাযোগ- ৯৬৭৩০১৮
- ভাসানী নভোথিয়েটার, বিজয় সরণি
সাপ্তাহিক বন্ধঃ বুধবার বন্ধ থাকে এবং সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। প্রদর্শনী শুরু হয় প্রতিদিন বেলা ১১টা, দুপুর একটা, বেলা তিনটা ও পাঁচটায় (শনি থেকে মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার)। শুক্রবার প্রদর্শনী সকাল ১০টা, বেলা তিনটা, বিকেল পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাতটায়। সকালের প্রদর্শনীর এক ঘণ্টা আগে এবং অন্যান্য প্রদর্শনীর দুই ঘণ্টা আগে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসফরের ক্ষেত্রে অগ্রিম টিকিট নেওয়ার সুযোগ আছে।
টিকিটের মূল্যঃ ৫০ টাকা।
যোগাযোগঃ ৯১৩৯৫৭৭
- নন্দন পার্ক, আশুলিয়া
প্রতিদিন খোলা থাকে বেলা ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। যেকোনো সরকারি ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে খোলা থাকে।
যোগাযোগ- ৯৮৯০২৮৩, ০১৮১৯২২৩৫২৯
- ফ্যান্টাসি কিংডম, আশুলিয়া
প্রতিদিন খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। শুক্রবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
যোগাযোগ- ৭৭০১৯৪৪-৪৯
- ওয়ান্ডারল্যান্ড, গুলশান-২
প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত।
যোগাযোগ- ৯৮৯৭১২৮
চট্রগ্রাম
বাংলাদেশের পর্যটন নগরী এবং বাণিজ্যিক নগরী হচ্ছে চট্রগ্রাম। চট্রগ্রামে যতটা না কৃত্রিম বিনোদন পার্ক আছে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি প্রাকৃতিক পার্ক এবং সৈকত রয়েছে। আপনি প্রিয় মানুষকে নিয়ে চলে যেতে পারেন চট্রগ্রাম এর প্রাকৃতিক পার্ক, নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ি পার্ক এবং সৈকতে। এছাড়া চট্রগ্রাম এ রয়েছে অসাধারণ কিছু হ্রদ।
আপনি শহরের ভেতরেই ঘুরতে চাইলে যেতে পারেন পতেঙ্গা সৈকতে, সেখানেই রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর ঘাঁটি নেভাল এলাকা। এছাড়া আপনি চাইলে পতেঙ্গা ১৫ নম্বর জেটি দিয়েই কর্ণফুলি নদী পার হয়ে চলে যেতে পারেন পার্কি সৈকতে। পার্কি এখনো বিপুলভাবে পরিচিতি পায়নি সারাদেশে, ফলে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা খুব কম এবং পরিবেশ অনেক বেশি প্রাকৃতিক।
শহরের ভেতরে আপনি আরও যেতে পারেন ফয়েজ লেকে, চিড়িয়াখানায়, চাঁদগাঁয়ের কালুর ঘাট এলাকার মিনি বাংলাদেশে। এছাড়াও যেতে পারেন নগরীর নন্দন কানন এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ডিসি পার্কে, লালখান বাজারে অবস্থিত বাটালি হিল পার্কে, আগ্রাবাদে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে, আগ্রাবাদের সিডিএ এলাকায় অবস্থিত শিশু পার্কে, কাজীর দেউড়ি এলাকায় অবস্থিত শিশু পার্ক এবং জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে একটু দূরে যেতে চাইলে যেতে পারেন, ভাটিয়ারী গলফ কোর্সে, ভাটিয়ারী হ্রদ পাড়ে, সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে, মিরসরাই মহামায়া হ্রদে, রাউজান রাবার বাগানে, বাশখালী ডুলা হজরা সাফারি পার্কে।
সিলেট
সিলেটের মাটি অসাধারণ বৈচিত্র্যে ভরা, কি নেই সিলেটে? প্রাকৃতিক রূপে দৃষ্টিনন্দনভাবে নিজেকে সাজিয়েছে সিলেট সদর। আপনি যদি সিলেটে থাকেন তবে অবশ্যই নিচের স্পট সমূহে প্রিয় জনকে সাথে ঘুরে আসতে ভুলবেন না।
এয়ারপোর্ট রোডের অ্যাডভেঞ্চার ওয়াল্ড, গোলাপগঞ্জের ড্রীমল্যান্ড পার্ক, সুরমা নদীর তীরে থাকা নগরীর ঐতিহাসিক কিং ব্রিজ এলাকা, কানিশ আইলের খেয়া ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন সুরমা নদী, মালনীছড়া চা বাগান, তারাপুর টি ষ্টেট, লাক্কাতুরা টি ষ্টেট। শহরের কাছেই রাহাত্তার গুলের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আসতে পারেন।
শহর থেকে একটু দূরে হলে ঘুরতে যেতে পারেন জাফলং এ, জাফলং এর পাহাড়ি প্রকৃতি, সীমান্তের এপার ওপার আপনাকে করবে বিমোহিত, তামাবিল- তামাবিলে রয়েছে বেশ কিছু প্রাইভেট রিসোর্ট বা পিকনিক স্পট, শ্রীপুর, শ্রীমঙ্গল, সারিনদী, লালখান, কুলা উড়ার প্রেম নগর রিসোর্ট,মাধবকুন্ড জলপ্রপাত।
প্রিয় পাঠক উপরের সকল স্পটের বিষয়ে যদি আরও বিস্তারিত জানার থাকে তবে অবশ্যই নিচের মন্তব্য ঘরে আপনার মন্তব্য আমাদের জানান। দি ঢাকা টাইমস আপনাদের মতামত এবং চাহিদা বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে।