দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বজুড়ে পরাশক্তিগুলোর কাছে বর্তমানে গোয়েন্দাবৃত্তি এবং দূরবর্তী স্থানে যুদ্ধ চালানোর জন্য বর্তমানে সবচেয়ে পছন্দের যন্ত্রটি হলো চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় উড়োজাহাজ বা ড্রোন। কিন্তু ভিনদেশের মাটিতে গোয়েন্দাবৃত্তিতে আগ্রহী এই পরাশক্তিগুলোর আস্থার স্থল এই ড্রোন কি হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া সম্ভব? এখন পর্যন্ত এ ধরনের দৃষ্টান্ত খুব একটা না দেখা গেলেও সামরিক প্রযুক্তিবিদ এবং প্রোগ্রামাররা বলছেন, এটা সম্ভব, এবং তা অতি সহজেই।
ড্রোন বিমান হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র পাঠানো আরকিউ-১৭০ মডেলের রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম একটি ড্রোনকে ভূপাতিত করে ইরানের সামরিক প্রযুক্তিবিদেরা। ইরানের পক্ষ থেকে ভূপাতিত ড্রোনটির যে ছবি প্রকাশ করা হয়, তাতে ড্রোনটিকে প্রায় অক্ষতই দেখা যায়। অর্থাৎ গুলি করে নয়, বরং অন্যকোনো উপায়ই ড্রোনটিকে মাটিতে নামিয়ে আনা হয়েছিল। ইরানের অক্ষ থেকে দাবি করা হয় তারা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই কাজটি করেছে, যদিও সিআইএ এবং আমেরিকার অনেক প্রোগ্রামার এবং কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ঐ দাবিকে প্রথমে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের উড্ডয়ন প্রযুক্তির অধ্যাপক টড হামফ্রে এই দলেই ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি নিজেই ড্রোন হ্যাকিংয়ের একটি প্রকল্প দাঁড় করান এবং ২ হাজার ডলারেরও কম খরচ করে আমেরিকার অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিভাগের বাঘা বাঘা সব কর্মচারীদের সামনে কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি ড্রোন হ্যাক করে দেখান।
কিভাবে হ্যাক হতে পারে ড্রোন ?
সামরিক বাহিনীর ড্রোনগুলো সাধারণত গোপন একটি কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে জিপিএস সিস্টেমের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সেই সিস্টেম ব্যবহার করেই তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলে। মোটাদাগে বলতে গেলে, হ্যাকার একের পর এক আক্রমণ করে প্রথমে জিপিএস সিস্টেমের সঙ্গে এবং পরবর্তীতে যেখান থেকে ড্রোনটি পাঠানো হয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এটা করতে পারলে ড্রোন নিজ থেকে স্বয়ংক্রিয় চালক হিসেবে চলতে থাকে। এরপরের কাজটি খুব সহজ। ভুল জিপিএস তথ্য পাঠিয়ে ড্রোনকে বিশ্বাস করাতে হবে, সে যেখানে নামতে চায় এটাই সেই জায়গা। ইরানও এভাবেই আমেরিকার আরকিউ-১৭০ মডেলের ড্রোনটিকে তার আকাশসীমার ওপর দিয়ে আফগানিস্তানে যাবার সময় নামিয়ে এনেছিলো নিজ মাটিতে। তারা এই পদ্ধতিটিকে ‘স্পুফিং’ বলে উল্লেখ করে, সোজা বাংলায় যার অর্থ ধাপ্পাবাজি!
বিপক্ষের হাতে যদি গোয়েন্দা ড্রোন গিয়ে পড়ে তবে গোয়েন্দাগিরি বদলে নিজের গোপন অনেক তথ্যও তাদের তুলে দিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে গুরুতর অপরাধীদের হাতে ড্রোন পড়লে নাশকতার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। আজকাল অনেক পন্যসরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও পণ্য সরবরাহে ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে। তাই এইসব ড্রোন হ্যাক হয়য়ে গেলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুণতে হবে কোম্পানিগুলোকে।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি