দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সিনেমা স্টাইলে আসামী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুই আসামী ড্রাইভার জাকারিয়া ও রায়হান পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
ত্রিশালে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে মৃত্যু ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ৩ জেএমবি সদস্যকে যারা ছিনিয়ে নিয়েছে, তাদের সবার নাম এবং পরিচয় পুলিশকে জানিয়েছে জেএমবি সদস্য ও ড্রাইভার জাকারিয়া ও রায়হান। এমনকি তারা জেএমবির কর্মকৌশল ও নানা চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। বর্তমানে জাকারিয়া ও রায়হান পুলিশের রিমান্ডে আছে।
পুলিশ সূত্র বলেছে, ২০১২ সালে ফারুক জামিনে কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হয়। এর আগে সে কারাবন্দি জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে কথা দেয় তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) জঙ্গিদের স্টাইলে তাদের ছিনিয়ে নেবে। এবং সেই মোতাবেক তারা ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনা শুরু করে ২০১৩ সালের জুলাই থেকে।
পুলিশকে ধৃত আসামীরা আরও বলেছে, জেএমবির আমির কারাবন্দি মাওলানা সাইদুরের-নরম নীতি’তে সে বিশ্বাসী নয়। জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘মুজাহিদদের’ আবারও একত্রিত করে ফারুক। ২০ ফেব্রুয়ারি একটি মামলায় হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসানকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানেইএকটি সিমসহ নতুন মোবাইল সেট পৌঁছে দেয় জেএমবির এহসার সদস্য মানিক। এরপর সেটি গোপনাঙ্গে বেঁধে কারাগারে নিয়ে যায় রাকিব। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানী বাজারে জঙ্গিরা মিলিত হয়ে অপারেশন ত্রিশালে কার কী দায়িত্ব, তা বণ্টন করে। এ বৈঠকের মূল পরিকল্পনা নাকি তুলে ধরেন জেএমবির এহসার সদস্য শফিক।
জাকারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টাঙ্গাইল থেকে সোমবার ঢাকায় আনা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের একটি উচ্চ পর্যায়ের দল তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ৩ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মাত্র তিন দিন আগে ২০ ফেব্রুয়ারি জেএমবির ১টি দল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মহড়া দেয়। পুলিশ জানতে পেরেছে, অপারেশন ত্রিশালে যারা অংশ নেয়, তাদের মধ্যে রয়েছে ফারুক, মিলন, শফিক, জাকারিয়া, সবুজ, মানিক, সাজেদুর, মাজিদসহ অন্তত ১২ জন জেএমবি সদস্য।
মূলত জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ফারুক ও কারাগারে তিন শীর্ষ জঙ্গির মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের অনেক তথ্য তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জাকারিয়া গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, ঘটনার দিন মিনিট দশেকের মধ্যে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মাইক্রোবাসের মধ্যে ছিনিয়ে নেওয়া তিন জঙ্গির ডাণ্ডাবেড়ি কাটা হয়। ডাণ্ডাবেড়ি কাটার সময় রাকিব তার হাতে বেশ আঘাতও পায়। জাকারিয়াকে আটকের পর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা জঙ্গিদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে।
জাকারিয়ার তথ্যমতে, কারাগারের বাইরে বর্তমানে সারাদেশে অন্তত ৩০ জেএমবি সদস্য সক্রিয় রয়েছে। ৩ জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা তারা জেএমবির বর্তমান ঘোষিত আমির মাওলানা সাইদুরকে উপেক্ষা করেই নিয়েছে। সে আরও জানায় ‘অপারেশন ত্রিশাল’ সফল হওয়ার পর রাকিবের কাছে নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। একইভাবে মাইক্রোবাসে থাকা সব জঙ্গির কাছেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে জাকারিয়া।
পুলিশ আশা করছে এসব জঙ্গীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে ব্যবস্থা যাবে।