দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশে শীত এলে অনেক ধরনের অতিথি পাখি আসে। এসব অতিথি পাখি বিশেষ করে গ্রামের নদীর ধারে, নাটোরের চলনবিল বা রাজধানীর বোটানিক গার্ডেনেও দেখা যায়। এমনই একটি অতিথি পাখির গল্প বলবো আপনাদের তার নাম লাল ফিদ্দা।
আকারে চড়ুই থেকে সামান্য বড়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। মূল বাসস্থান হিমালয় ও এর আশেপাশের পাহাড়-জঙ্গল। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। পৌষ-মাঘ মাসে আমাদের দেশে যত্রতত্র দেখা যায়। লোকালয় থেকে খানিকটা দূরে নির্জনে বিচরণ করতে পছন্দ করে। পাহাড়ি অঞ্চল, নলখাগড়ার বন, তুলা, তিসি, ভুট্টা, কাউন ক্ষেতেও এদের বেশ দেখা মেলে। এসব ক্ষেত খামারে ঘুরে ঘুরে পোকা মাকড় শিকার করে। ঝোপে ঝাড়ে, ফসলের শীষে ঘাপটি মেরে বসে থাকে শিকারের আশায়। ছোট কীট পতঙ্গ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠোঁটে চেপে ধরে। নিজের শিকার এলাকা শত্রুমুক্ত রাখতে ‘হুইট-চ্যাট, হুইট-চ্যাট’ সুরে ডেকে অন্য পাখিদের ভয় পাইয়ে দিতে চেষ্টা করে। আকারে ছোট, তাই বড় পাখিদের তেড়ে যাওয়ার সাহস বা সাধ্য কোনটাই তার নেই। শুধু দূর থেকে শব্দ করে অন্যদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।
‘লাল ফিদ্দা’ ইংরেজি নাম :‘কমন স্টোন চ্যাট’, বৈজ্ঞানিক নাম :Saxicola Torquata, উপগোত্র :‘টার্ডিনি’, এরা ‘লাল চ্যাট’ নামেও পরিচিত। এরা লতা-গুল্মের ভেতর ঘুরে বেড়ায় এবং খুব চঞ্চল পাখি বলে অনেকে এদেরকে ‘গুল্মচঞ্চল’ নামেও ডাকে।
এ পাখি লম্বায় ১২-১৩ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত কালো। গলার দু’পাশে সাদা ছোপ। লেজ, ডানা পাটকিলে কালো। বুক লালচে কমলা পেটের দিকে তা বিস্তৃত হয়েছে। তলপেটের দিকে হালকা কমলা রঙ সাদার সঙ্গে মিশে গেছে। বস্তিপ্রদেশ ধবধবে সাদা। পা, ঠোঁট কালো। স্ত্রী- পুরুষে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। স্ত্রী পাখির পিঠ গাঢ় ধূসরাভ-বাদামি ও ডোরা কাটা। ওদের বস্তিপ্রদেশ লালচে বাদামি। খাদ্য তালিকায় রয়েছে নানা রকম ছোটখাট কীট পতঙ্গ।
প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুলাই। পাকিস্তান, নেপালের দুর্গম পাথুরে পাহাড়ের ওপর শুকনো ঘাস, লতা-পাতা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা অনেকটাই পেয়ালা আকৃতির। ডিম পাড়ে ২-৪টি (ডিমের সংখ্যা নিয়ে সামান্য বিতর্ক রয়েছে), ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন।
আসুন আমরা সবাই মিলে এসব অতিথি পাখিদের রক্ষা করি। কারণ আমাদের দেশের মানুষ অনেক সময় অজ্ঞতাবশত এসব অতিথি পাখি শিকার করি। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার ওরা আমাদের অতিথি ওদের আতিথিয়তা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ওরা আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই কেও যাতে এসব অতিথি পাখি শিকার না করে সেদিকে আমাদের সকলকেই সজাগ থাকতে হবে।