দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রামের মলকা বানু-মনু মিয়ার প্রেম উপখ্যান ইতিমধ্যে লোকগাঁথা, যাত্রাপালা, মঞ্চনাটক ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র নির্মিত হয়েছে। তাদের প্রেম কাহিনী নিয়ে রচিত এসব যাত্রাপালা, নাটক, সিনেমা দেশের সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাদের প্রেম উপাখ্যান অনেকের কাছে কল্পিত কাহিনী বা রূপকথা মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু তা নয়। মলকা বানু-মনু মিয়ার প্রেম উপখ্যান ছিল বাস্তবভিত্তিক প্রেম কাহিনী।
ইতিহাস খ্যাত মলকা বান-মনু মিয়ার প্রেম উপাখ্যানের অন্যতম কালজয়ী স্বাক্ষী বাঁশখালীর সরল ইউপিতে অবস্থিত মলকা বানুর মসজিদ ও দীঘি। মলকা বানুর পিতার নাম আমির মোহাম্মদ চৌধুরী। বাঁশখালীর সরল গ্রামে ছিল তাদের বসতি এবং জমিদার এস্টেট। সরল গ্রামে মলকা বানুর নামে রয়েছে একটি প্রাচীনতম মসজিদ ও বিলুপ্ত প্রায় একটি দীঘি। আনোয়ারার জমিদার পুত্র মনু মিয়ার সাথে মলেকা বানুর বিয়ে ইতিহাসের এক চমকপ্রদ ঘটনা। ইতিহাসের সূত্র ধরে জানা যায়, মলকা বানু-মনু মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবন শুরু করেন। বিবাহকালীন সময়ে সারাদেশে অনেক মুখরোচক গল্প রয়েছে। “বাঁশখালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আলোড়ন”র সূত্র ধরে জানা যায়, আমির মোহাম্মদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি সরলে বসবাস করতেন এবং তিনি ছিলেন প্রভাবশালী ও জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যা ছিল ইতিহাস খ্যাত মলকা বানু চৌধুরী। মলকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আনোয়ারার জমিদার পুত্র মনু মিয়ার সাথে। তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তানের জম্ম হলে মলকা বানু স্বামীর সাথে অভিমান করে পিতৃবাড়ি বাঁশখালীর সরলে চলে আসেন।
সরলে বর্তমানে যে মসজিদ এবং দীঘি স্মৃতি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে ওই মসজিদটি মলকা বানুর পিতা আমির মোহাম্মদ নির্মাণ করে বলে দাবি করেন এবং তাতে ফরাসি ভাষায় একটি শিলালিপি ছিল। যা পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দূর্যোগে বিলীন হয়ে যায়। শত শত বছরের প্রাচীন ইতিহাসের স্মৃতিবহ মসজিদটির প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বিশাল দীঘিটি বর্তমানে ভরাটের দ্বারপ্রান্তে। মলকা বানুর মসজিদ ও দীঘিকে পুন:সংস্কার করা না গেলে ইতিহাস থেকে মুছে যাবে মলকা বানুর স্মৃতি। মলকা বানুর মসজিদটি অত্যন্ত জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকলেও বিশাল আকারের দীঘিটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই দীঘিতে শুষ্ক মৌসুমে লবণ চাষ এবং বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করেন স্থানীয় জনগণ।
ইতিহাসের নিদর্শন রক্ষার জন্য মলকা বানুর মসজিদ ও দীঘি সংরক্ষণ করা জরুরি বলে এলাকাবাসী মনে করেন।