দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইংল্যান্ডের রাস্তায় যদি আপনি বাংলাদেশী ঝালমুড়ির কথা শুনেন তবে কিছুটা অবাক হতেই হবে। কিন্তু বেশ কয়েকবছর যাবত খোদ ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন বাংলাদেশের আবদূর রহিম। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে, আজ ঝালমুড়ি বিক্রির মাধ্যমে সেই ভাগ্যর দেখা পেয়েছেন তিনি।
বরিশালের আবদুর রহিম ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে আজ থেকে ১৬ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যর বেশ দুবাইতে পাড়ি দেন। কিন্তু শারীরিক পরিশ্রমের নির্মমতা, অতিরিক্ত গরম এবং ছোট্ট কুঠিরে একসাথে ২০-২২ জনের একসঙ্গে থাকা তার জন্য দুবাইয়ে অবস্থান প্রতিকূল করে তোলে। দুবাইয়ে তিনি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। তারপর আরেক দালালের হাত ধরে পাড়ি জমালেন ব্রাজিলে সেখানে কয়েক বছর থেকে অবশেষে একদিন চলে আসলেন লন্ডনে। ততদিনে তিনি বিদেশ বিভূঁইয়ে কেটে গিয়েছে প্রায় ৫ বছর। স্বল্প শিক্ষা, ইংরেজি ভাষার দুর্বলতা আর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে তারপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে তেমন কিছু করা হয়ে উঠছিল না। তারপর একদিন মনে হলো ঝালমুড়ি বিক্রি করলে কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ আনুমানিক ৩৫ ডলার খরচ করে জোগাড় করলেন একটি ঠেলাগাড়ি আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। তারপর শুরু করলেন ঝালমুড়ির ব্যবসা। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের সবজি বাজারের পাশে বর্তমানে আব্দুর রহিমের ভাসমান ঝালমুড়ির দোকান।
কেন ঝালমুড়ি বিক্রির আইডিয়া মাথায় আসলো এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহিম বলেন, সারাদিন কাজ শেষ করে ঘরে ফিরে যখন ঝালমুড়ি বানিয়ে তার সঙ্গীদের খাওয়াতেন তখন তারা এর বেশ প্রশংসা করতো। তার এই সঙ্গীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ফিলিপাইনের, আফ্রিকার কিংবা মরক্কোর। বর্তমানে এই ব্যবসা করে তিনি বেশ ভালোই আছেন। ছয় মাস পর পর টাকা পাঠাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে টাওয়ার হ্যামলেটের সভায় যাচ্ছেন সেখানে গিয়ে দেশের বিভিন্ন অবস্থার কথা জানতে পারছেন। তাছাড়া সেখানে তার ঝালমুড়ি বিক্রিও হয় ভালো। তিনি আরো জানান টাওয়ার হ্যামলেটের সদ্য নির্বাচিত মেয়র লুৎফুর রহমান তার ঝালমুড়ির বেশ ভক্ত। আব্দুর রহমান ভালো ইংরেজি না জানলেও ভালো ককি জানেন। ককি হলো ইংল্যান্ডের রাস্তার প্রচলিত ইংলিশ যা শারীরিক অঙ্গভঙ্গিসহ ইংরেজি কথা এটি সহজে বোঝা যায় এমন ইংরেজি। কৃষ্ণাঙ্গরা এই ভাষায় বেশি ব্যবহার করেন। বেচাবিক্রির জন্য তার এই হোয়াইট চ্যাপেল বেছে নেওয়ার কারণ এখানে বেশিরভাগ বাংলাদেশের সিলেটের অধিবাসী বসবাস করেন।