দি ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হচ্ছে এই হরতাল।
সকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে হরতাল সমর্থকরা টায়ার জালিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিহত করে। নারায়ণগঞ্জ, সিলেট রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কর্মীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আজকের ৪ ডিসেম্বরের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে সারা দেশে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত শীর্ষনেতাদের মুক্তি এবং সমাবেশের অনুমতি না দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামী সোমবার দুপুরে এই হরতাল ডাকে। তাদের প্রধান শরিক বিএনপিও এই হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে।
হরতালে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ভোর থেকেই প্রতিটি সড়কে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। তবে এর মধ্যেও রাজধানীর কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও শ্যাওড়াপাড়ায় ঝটিকা মিছিল বের করে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিরও চেষ্টা করে তারা। হরতালের শুরুরদিকে সড়কে কিছু অটোরিকশা ও রিকশা দেখা গেলেও বাসের সংখ্যা ছিল বিগত কয়েকটি হরতালের তুলনায় অনেক কম। অনেক মানুষকে বিভিন্ন মোড়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, হুমায়ুন রশিদ স্কয়ার ও চন্ডিপুল, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও টঙ্গীতেও পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাংচুরের খবর দিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেইট এলাকায় সকাল পৌনে ৭টার দিকে কিছু যুবক হঠাৎ রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে দিলে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে ঢিল ছুড়তে ছুড়তে বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়ে তারা। প্রায় একই সময়ে যাত্রাবড়ীর কুতুবখালী এলাকায় হরতাল সমর্থকরা ঝটিকা মিছিল নিয়ে অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাংচুর করে। সেখানেও সড়কে টায়র জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলে। অপরদিকে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয় কাজীপাড়া ও শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় রোকেয়া সরণীতেও। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সাভারে বিশ্বাস পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, সারাদেশে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সরকারের ‘দুঃশাসন’, ‘সীমাহীন দুর্নীতি’ ও ‘ইসলামী মূল্যবোধের ওপর আঘাত’ প্রতিরোধের কথা বললেও তাদের প্রধান দাবি যুদ্ধাপরাধের মামলায় আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামী এই হরতালের ডাক দিয়েছে।
উল্লেখ্য, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানসহ আট নেতার বিচার চলছে। শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে নভেম্বর মাসের শুরু থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে আসছে জামায়াত-শিবির। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের গাড়িবহরও তাদের হামলার মুখে পড়ে। এ ছাড়া জয়পুরহাটে এক পুলিশ সদস্যের গায়ে আগুন দেয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত দেড়শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার জামায়াত কর্মীকে।
অপরদিকে বিএনপির পাশাপাশি ইসলামী ঐক্যজোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও রাতে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।