দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা মনে করে থাকি রান্নাতে কম মসলা ব্যবহার করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে আমরা তা করেও থাকি। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এবার সে ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, মসলা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে।
ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা কয়েক ধরনের মসলা দিয়ে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, রক্তচাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে ক্রনিক হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় তারা দেখতে পাচ্ছেন নতুন এক আশার আলো।
ভারতের চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান বিশেষজ্ঞ এস থানিকাচালামের নেতৃত্বে এই গবেষণা করা হয়। গবেষণাপত্রটি চিকিৎসা সাময়িকী এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিনে প্রকাশ করা হয়।
গবেষক দলের নেতা এস থানিকাচালাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এতদাঞ্চলের রান্নায় ব্যবহৃত সাধারণ মসলা ব্যবহার করেই তারা এই গবেষণা চালিয়েছেন। এলাচ, আদা, জিরা, মরিচ, শ্বেতপদ্মের পাপড়িসহ বেশ কিছু উপাদান মিশিয়ে তারা ইঁদুরকে খেতে দেন খাবারের সঙ্গে।
তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণায় আমরা দেখেছি, ওই খাবারে ইঁদুরের শরীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ডে অনেক পরিবর্তনও এসেছে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ অনেকটা কমে এসেছে। তাদের তৈরি করা ওষুধে কেবল ইঁদুরের রক্তচাপই নিয়ন্ত্রণে আসেনি, ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ও কমে এসেছে।’
ওই গবেষকরা মূলত কাজ করেছেন রেনোভাসকুলার হাইপারটেনশন নিয়েই। কিডনির ধমনী সরু হয়ে গেলে এই ধরনের হাইপারটেনশন অথবা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বেই উচ্চ রক্তচাপ খুব সাধারণ একটি রোগে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান শুধুমাত্র ভারতের শহর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতি ৪ জনে একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগী বলে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বেই এই ধরনের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ওষুধের উচ্চমূল্য ও বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেকেই নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নেন না।
থানি কাচালাম জানান, এবারের গবেষণায় তাঁরা মসলার যে মিশ্রণটি ব্যবহার করেছেন, প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যেও তার উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ভেষজ ওষুধের ব্যবহার আমাদের এখানে চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এর ব্যবহারবিধি তৈরি করার কাজটিই কেবল বাকি।
বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন, এই ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ইঁদুরের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হয়। এরপর এই ওষুধ পরীক্ষা করা হবে মানুষের ওপর। দামে কম ও কার্যকর একটি ওষুধ তৈরি করাই গবেষকদের মূল লক্ষ্য।