দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ধর্ষিতাকেই বিয়ে করলো এক ধর্ষক। ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীতে, ধর্ষিতা আছমা আক্তারকে বিয়ে করেছে ধর্ষক আলমগীর মুন্সি।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ধর্ষণ প্রতিরোধে মেয়েদের সচেতনতা জরুরি। তবে এবার নরসিংদীর আছমা আক্তার ধর্ষণ প্রতিরোধে এক বিশেষ ভূমিকা রখেছেন। সমাজ ধর্ষিতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ তো করেই না বরং ধর্ষকও সামান্য শাস্তি অথবা বিনা শাস্তিতে ছাড় পেয়ে যায়। এটাই আমাদের দেশের সাধারণ চিত্র। কিন্তু নরসিংদীর আছমার সাহসিকতায় এবার ব্যত্যয় ঘটলো। ধর্ষিতাকেই শেষ পর্যন্ত ঘরে তুলতে বাধ্য হলো ধর্ষক। তবে এটি ঘটেছে প্রধানমন্ত্রীর নিজ হস্তক্ষেপে!
নরসিংদীর সদর উপজেলার কোতালিরচর গ্রামের মৃত হাছেন আলীর মেয়ে আছমা আক্তার (২২) নরসিংদী সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্রী। একই এলাকার তমুজ উদ্দিনের ছেলে মো: আলমগীর মুন্সি (৪২) আছমা আক্তারকে কলেজে আসা-যাওয়া পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। এভাবে উত্ত্যক্ত এবং ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকিতেও যখন কাজ হয়নি, তখন আলমগীর ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। আছমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রায় ৬ মাস পার হওয়ার পর আছমা আলমগীরকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে আলমগীর নানা তালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে বিয়ে করবেন না বলে সাফ জানিয়েও দেন।
এরপর ওই কলেজছাত্রী এলাকাবাসী ও পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও ব্যর্থ হলে অবশেষে বাধ্য হয়ে আত্মপ্রত্যয়ী আছমা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য একাকী ছুটে যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আছমা আক্তার ৮ আগস্ট বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে সক্ষম হন।
আছমা আক্তারের কাছে পুরো ঘটনা শোনার পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টির আশু সমাধানের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পিএস-২ শেখর সাহেব নরসিংদীর পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানালে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো: মোশারেফ হোসেন আছমার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আলমগীর মুন্সিকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০১০ (সংশোধনী/০৩) -এর ৯ (১) ধারা মোতাবেক গত ১১ আগস্ট মামলা (মামলা নং ৩২) দায়ের করেন।
এদিকে মামলার দিনই আসামি আলমগীর মুন্সিকে মাধবদী বাজারস্থ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেল-হাজতে থাকা আলমগীর তার ভুল বুঝতে পেরে লোক মারফত আছমাকে বিয়ে করতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি জানান। ২৮ আগস্ট আছমা জেল গেটে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে দু’জনের আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিয়ের ব্যাপারে একমত হন। এরপর আছমা আলমগীরের জামিনের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়ে বিষয়টি আপোষে মীমাংসা করা হয়েছে মর্মে আবেদন জানালে, আদালত মানবিক দিক বিবেচনা করে ৩১ আগস্ট আসামি আলমগীরকে জামিন দেন। এরপরের দিন ১ সেপ্টেম্টবর সোমবার উভয়পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে আছমা ও আলমগীরের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আছমার সাহসিকতা এবং প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক নির্দেশের কারণে আলমগীরের মতো লম্পট শেষ পর্যন্ত আছমাকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হলো। সমাজের সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত নারীদের আছমার মতোই এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা একান্ত দরকার। তাহলে সমাজে আর কেও এমন কুকর্ম করার সাহস পাবে না।