দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশে জলযান যেমন লঞ্চ ডুবে গেলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করা হলো যার নাম ‘লোকেশন ডিটেক্টর’। এই যন্ত্র দিয়ে সহজেই ডুবে যাওয়া জলযান চিহ্নিত করা যাবে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা দেখেছি জলযান বিশেষ করে লঞ্চডুবির পর সেই লঞ্চ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি কোথায় চলে যায় আমাদের দেশের যন্ত্রগুলো তা ধরতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে একটি ডুবে যাওয়া লঞ্চ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এমন এক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি আবিষ্কার করা হয়েছে যেটি ডুবে যাওয়া লঞ্চকে চিহ্নিত করা যাবে। এই যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘লোকেশন ডিটেক্টর’।
মূলত জলযানের সামনে এবং পেছনের অংশে লাগানো থাকবে কম্পন সৃষ্টিকারী ২টি ডিভাইস। পানি নিরোধক কৃত্রিম বিদ্যুৎকোষ দিয়ে চলবে এই ডিভাইসগুলো। ডুবে যাওয়া জলযান হতে ডিভাইসগুলো ক্রমান্বয়ে কম্পন সৃষ্টি করতে থাকবে পরবর্তী ৭দিন পর্যন্ত। এরমধ্যে উদ্ধারকর্মীরা পানির উপরিভাগ হতে হাইড্রোসোনার মেশিনের সাহায্যে ভাইব্রেটর হতে সৃষ্ট কম্পনকে শনাক্ত করে খুব সহজেই জলযানের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবেন। বলা হয়েছে, এই ডিভাইসটি নদীর মোহনা অথবা যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশেও কাজ করতে সক্ষম।
এই ডিভাইসটির উদ্ভাবক কৃষিবিজ্ঞানী ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন। ‘লোকেশন ডিটেক্টরের’ আরেকটি গুণ রয়েছে। ডিভাইসটি স্বল্প বা গভীর জলে ডুবে যাওয়া জলযানের অবস্থান শনাক্ত এবং জলযানে আবহাওয়ার পূর্বাভাসও দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবক ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন।
উদ্ভাবক ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভেসে থাকার উপযোগী অ্যালুমিনিয়াম এবং কর্ক দিয়ে তৈরি ডিভাইসটি লাগানো থাকবে জলযানের মাস্তুলে। আর এরসঙ্গে যুক্ত থাকবে ৬০-৭০ ফুট দীর্ঘ তামার একটি তার। ডিভাইসটিতে বার্তা গ্রহণ এবং প্রেরণে সক্ষম ইলেকট্রিক চিফ বসানো থাকবে এতে।
জলযানটি ডুবে যাওয়ার পর ‘লোকেশন ডিটেক্টর’ ডিভাইসটি সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠবে। আর তৎক্ষণাৎ ডিভাইসটি শব্দসহ সিগনালও দিতে থাকবে। আশপাশে অবস্থানকারী কোনো যান সেটা দেখে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসতে পারবেন। আবার এই ‘লোকেশন ডিটেক্টরে’ যেকোনো মোবাইল অপারেটরের চিপ লাগানো থাকবে। এটি ভেসে থাকা জলযানকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসও দেবে। আবার জলযানের অবস্থান নির্ণয় এবং জলযানকে মুখোমুখি সংঘর্ষের হাত থেকেও রক্ষা করবে। বলা হয়েছে পুরো ডিভাইসটি চলবে ব্যাটারির সাহায্যে। আবার কোনো কারণে যদি ব্যাটারি অচল হয়ে যায় সেকারণে সিগনাল প্রেরণের জন্য ক্ষুদ্র সোলার প্যানেলও লাগানো থাকবে। সিগনালে ব্যবহৃত লাইট বিকল হলে দূর হতে শনাক্ত করার জন্য ডিভাইসটি রেডিয়ামে মোড়ানো থাকবে।
‘লোকেশন ডিটেক্টর’ ডিভাইসের সঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ লোড ডিটেক্টর নামে আরও একটি ডিভাইস যুক্ত থাকবে। এটি জলযানের এক পাশের বাইরের অংশে লাগানো থাকবে। এই ডিভাইসটি জলযানে প্রবেশের পথে বড় মনিটরের সঙ্গে ক্যাবল দিয়ে সংযুক্ত থাকবে। ডিভাইসটি যাত্রীদের যানের পানির উচ্চতা এবং যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পর্কেও সিগনাল দেবে। যাত্রীরা মনিটর থেকেই এসব তথ্য দেখতে পারবেন। সবুজ, হলুদ এবং লাল বাতির সিগন্যাল দেখে যাত্রীরা জলযানে আরোহণের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিওটিএ) পৃষ্ঠপোষকতা যদি পাওয়া যায় তাহলে এই ডিভাইসটি কাজে লাগানো সম্ভব বলে জানান এর উদ্ভাবক ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন। যেহেতু আমাদের দেশে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের নানা অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া জলযান ডুবে গেলে তা শনাক্ত করার সমস্যাও বিদ্যমান। তাই দেশীয় এই প্রযুক্তিটি কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।