দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে মালয়েশীয়া এবং ইন্দোনেশীয়ায় আশ্রয় পাচ্ছে ভাসমান বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এসব অধিবাসীরা মানবেতরভাবে অনাহারে সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে।
মানুষকে মনে হয় কখনও এমন অসহায় অবস্থায় পড়তে দেখা যায়নি। ঠিক এমন এক অমানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অধিবাসীরা। খাওয়ার নেই, পানি নেই, আশ্রয় নেই এক অমানবিক পরিস্থিতির শিকার এসব মানুষ সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে এদেশ থেকে ওদেশে। কেও তাদের আশ্রয়টুকুও দিচ্ছে না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এতোবড় পৃথিবীতে যেনো মানুষ হিসেবে তাদের কোনো পরিচয় নেই। এমন এক অমানবিক পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে এলেন এসব অসহায় মানুষের পাশে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সাগরে ভাসমান বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের সাময়িক ভিত্তিতে আশ্রয় দিতে সম্মত হয়েছে মালয়েশীয়া ও ইন্দোনেশীয়া। গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই বিষয়ে সম্মত হয়েছে দেশ দুটি।
গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরপথে মালয়েশীয়া ও ইন্দোনেশীয়াগামী হাজারও অভিবাসী মানবেতরভাবে নৌকায় ভাসছে। আন্দামান সাগর ও মালাক্কা প্রণালিতে ভাসতে থাকা এসব অভিবাসীর জীবন ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে। খাবার ও পানীয় জলের তীব্র সংকটে এক মানবেতন জীবন অতিবাহিত করেছে এসব অধিবাসীরা। মাঝে-মধ্যেই মৃত্যুর সংবাদও আসছে। এই অবস্থায় মালয়েশীয়া ও ইন্দোনেশীয়ার আশ্রয় দেওয়ার এই উদ্যোগ প্রাণে বাঁচাবে হাজার হাজার সাগরভাসা মানুষকে।
কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ড, মালয়েশীয়া ও ইন্দোনেশীয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মানবিক বিবেচনায় অস্থায়ী ভিত্তিতে সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। বৈঠক শেষে মালয়েশীয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফা আমান জানিয়েছেন, ‘তার দেশ ও ইন্দোনেশীয়ার নৌবাহিনী ভাসমান নৌকাগুলো যেভাবে তাদের জলসীমা হতে অন্য অঞ্চলের দিকে ঠেলে দিয়েছে, এখন থেকে আর তা হবে না।’
তিনি বলেছেন যে, ‘এসব মানুষকে আমাদের সাহায্য করা দরকার। এই অবস্থায় শর্ত মেনে অভিবাসীদের আমাদের কূলে ভিড়তে দেওয়া হবে।’
বৈঠকের পরে আনিফা আমান সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘সাগরভাসা ৭ হাজার অভিবাসীকে আশ্রয় দেবে ইন্দোনেশীয়া এবং মালয়েশীয়া। অস্থায়ী ভিত্তিতে আশ্রয় দেওয়া এসব অভিবাসীদের আগামী এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতায় নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
এদিকে গতকাল বুধবার সকালেও ইন্দোনেশীয়ার উপকূল হতে ৪৫০ জন ভাসমান অভিবাসীকে ইন্দোনেশীয়ার জেলেরা উদ্ধার করে কূলে নিয়ে যায়। তাদের পূর্ব আচেহ জেলার একটি গ্রামে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন সাগরে ভাসতে থাকা আশ্রয়প্রার্থী এসব অভিবাসীদের অধিকাংশই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বাংলাদেশের দরিদ্র লোকজন।
অভিবাসী সংকটে সহায়তায় রাজি হয়েছে মিয়ানমার
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক অভিবাসী সংকট সমাধানে প্রথমবারের মতো সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে দীর্ঘদিন যাবত বেঁকে থাকা মিয়ানমার। দীঘদিন দেশটি এই সংকটের দায় অস্বীকার করে আসছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘অভিবাসী সংকট’ নিয়ে গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুরে ত্রিদেশীয় আলোচনার প্রাক্কালে এই বিষয়ে ইয়াঙ্গুন তাদের আগের কঠোর অবস্থানে পরিবর্তন এনে নমনীয় মনোভাব দেখালো।
উল্লেখ্য, অভিবাসী সংকটের দায় অস্বীকার করায় মিয়ানমারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। আঞ্চলিক ‘অভিবাসী সংকট’ নিয়ে সবশেষ পোপ ফ্রান্সিসের কাছ হতেও মন্তব্য এসেছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ ও ভুক্তভোগীদের প্রতি মানবিক সহায়তার আহ্বান জানায়।