দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি মানুষ বহুকাল আগে থেকেই গুহাতে বসবাস ত্যাগ করেছে। তবে এখনও মাঝে-মধ্যে দু’একটি খবর শোনা যায়। আর্জেন্টিনার এক ব্যক্তি ৪০ বছর ধরে গুহায় বসবাস করছেন!
আর্জেটিনার গুহায় বসবাসকারী ওই ব্যক্তির নাম পেদ্রো লুকা। তার বয়স ৭৯ বছর। অরণ্য তেমন একটা না থাকলেও শিকার করে পেট চালান তিনি। তার বক্তব্য হলো, একটা পেট তো, তাই শিকারের কোনো অভাব হয় না। নেই লাইনের পানি, নেই বিদ্যুৎ, পিপাসা লাগলে ঝরনার পানি পান করেন। এভাবেই আর্জেন্টিনার উত্তরের টুকুম্যান প্রদেশের একটি পাহাড়ের গুহায় দীর্ঘ ৪০টি বছর কাটিয়ে দিলেন ওই ব্যক্তি।
যখনই ক্ষুধা লাগে তখনই তিনি হাতে তুলে নেন তার প্রিয় রাইফেলটি। এরপর বেরিয়ে পড়েন শিকারের খোঁজে।
পেদ্রো লুকার খাওয়ার পানির প্রধান উৎস হলো একটি ক্রিকের (ঝরনার পানির ধারা) পানি।
পেদ্রো লুকা জানিয়েছেন, ‘একেবারে টলটলে পানি, খেতেও খুব ভালো লাগে,’। গুহায় তার সঙ্গে বসবাস করে ১১টি মোরগ-মুরগি ও দুটি ছাগল। সারাদিন পাহাড়ের এখানে সেখানে আপন মনে ঘুরে বেড়ায় তারা। রাত হলেই আশ্রয়ের সন্ধানে আবার ফিরে আসে গুহায়। পুমা ও অন্যান্য শিকারি প্রাণীর হামলার ভয় রয়েছে তাদেরও!
পেদ্রো লুকা ভোরে মোরগ ডাকার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম হতে জেগে ওঠেন। তারপর আগুন জ্বালান। আগুনের সেই তাপে পুরো গুহায় উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় তার অনুভূতি হয় খুবই এক আরামদায়ক, ‘আগুন যেনো এক জাদুর মতো। মনও ভরে যায় তার উষ্ণতায়।’
পেদ্রো লুকার গুহায় শৌখিন তেমন কিছুই নেই। তবে ব্যাটারিচালিত ছোট্ট একটি রেডিও রয়েছে। তবে তা বাজানোর সময় পান না। আর বাজলেও তা ঘ্যার ঘ্যার করে। পাহাড়ের ওপর ভালো সিগন্যাল পাওয়া যায় না।
পেদ্রো লুকাকে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে তিন ঘণ্টা করে হাঁটতে হয়। গুহায় পৌঁছানোর জন্য উঠতে হয় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। বয়সের ভারে তার ত্বক সামান্য কুঁচকে গেছে। দাঁতও পড়ে গেছে কয়েকটি। তারপরও তাকে দেখতে ৮০ বছরের নয়, অনেক কম বয়সের মানুষ বলেই মনে হয়।
পেদ্রো লুকা বক্তব্য হলো, ‘নিঃসঙ্গ জীবন আমার খুব ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে বন্য জীবনের স্বাদ নিতে। আসলে ছেলেবেলা হতেই এ রকম একটি জীবন আমি চেয়েছিলাম’। তিনি ছোট বেলায় বেড়ে ওঠেন দাদার কাছে। বাড়ি ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। পেদ্রো লুকা প্রথমে যান উত্তর আর্জেন্টিনা, পরে কয়লা পরিবহনের কাজ নিয়ে যান বলিভিয়াতে।
পেদ্রো লুকা আলাপকালে বলেন, ‘আমি কখনও আমাকে জিজ্ঞেস করে দেখিনি যে, এমন একটি জায়গা কেনো আমি বেছে নিলাম। কাছাকাছি আরেকটি গুহা রয়েছে। তবে এটিকেই আমার খুব বেশি ভালো লাগে।’ পেদ্রো লুকা আরও বললেন নিজের ইচ্ছার কথা, ‘কখনও কখনও আমার মনে হয়, ঘুরেফিরে পৃথিবীটাকে যদি দেখতে পেতাম তাহলে বোধহয় খুব ভালো লাগতো।’
এভাবেই কেটে গেছে আর্জেন্টিনার গুহায় ৪০টি বছর। বাকি জীবনও পেদ্রো লুকা এভাবেই গুহায় কাটাবেন নাকি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন এমন প্রশ্নের উত্তর তার কাছে পাওয়া যায়নি। এমন প্রশ্নে তিনি নীরব থেকে কি যেনো ভেবে গেছেন!
তথ্য সূত্র: www.tn8.tv