দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গবেষণা ক্ষেত্রে বাংলাদেশী গবেষকরা এখন আর পিছিয়ে নেই। এবার যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ক্যান্সার গবেষণায় সাফল্য দেখালেন!
আমরা সকলেই জানি বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ও ভীতিকর রোগ হলো ক্যান্সার। ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য ব্যধিকে আমরা এখনও পুরোপুরিভাবে আয়ত্বে আনতে পারিনি। বিভিন্ন সময় গবেষকরা নানা আবিষ্কার করেছেন। তবে সেগুলো খুবই অপ্রতুল। গবেষকরা দিনরাত লেগে রয়েছেন ক্যান্সার গবেষণায়।
বর্তমান যুগ আধুনিক হলেও এখনও মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। মানবদেহে নানা ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। তবে সকল ক্যান্সারের ভয়াবহতা এবং পরিণতি এক নয়। ক্যান্সার যদি শুরুতেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে এর চিকিৎসা অনেক সহজ। তখন এই মরণ ব্যধি থেকে মুক্তির সম্ভাবনাও বেড়ে যায় বহু গুণ।
ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করি। শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় প্রচলিত এসব পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা। আর তাই প্রাথমিক পর্যায়ে (early stage) ক্যান্সার শনাক্তকরণের সহজ এবং অধিক কার্যকরী (more efficient) পদ্ধতি উদ্ভাবনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন গবেষকরা।
বাংলাদেশের কৃতি সন্তান ড. মো. জসিম উদ্দিন চিকিৎসা বিজ্ঞানের এমনই একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vanderbilt University)।
বাংলাদেশী এই গবেষক জানিয়েছেন, ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়েই আক্রান্ত কোষগুলোতে কক্স-২ (COX-2) নামে একটি এনজাইমকে অতিমাত্রায় উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। মো. জসিম উদ্দিন ও তাঁর গবেষণা দল এই বিশেষ আলোক সংবেদী কিছু রাসায়নিক যৌগ আবিষ্কার করেছেন। যেগুলো নির্দিষ্টভাবে (Selectively) কক্স-২ এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেটি কেবলমাত্র ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোকেই শনাক্ত করতে সক্ষম। তিনি বলেছেন, বিষয়টিকে জোনাকি পোকার সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। অন্ধকারে যেমন জোনাকি পোকারা জ্বলে ওঠে, আর তখনই তাদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
পেটেন্টেড (Patent No. US 2010 / 0254910) এই রাসায়নিক যৌগগুলোর মধ্যে একটি হলো ফ্লোরকক্সিব এ (Fluorocoxib A) নামে পরিচিত। প্রাণীদেহে প্রবেশ করানোর পর এটি কক্স-২ এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত হয়েই তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে। আক্রান্ত কোষগুলোতে খুব সামান্য পরিমাণে কক্স-২ এনজাইম উপস্থিতি থাকলেও সেগুলোকে খুব সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। নতুন এই আবিষ্কারটি প্রথম ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় একটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নালে (Cancer Research, 2010, 70,3618-3627)।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারের পর নানান সম্মানের পাশাপাশি, এই সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে ওমিক্স (Omics International) গ্রুপের রিকগনিশন সনদও লাভ করেন ড. মো. জসিম উদ্দিন। খুব শীঘই এই প্রযুক্তিটি মানবদেহে প্রয়োগের আশা করছেন ড. মো. জসিম উদ্দিন। তিনি মনে করেন, যৌগ দিয়ে ত্বক (skin), মূত্রথলি (bladder), অন্ন নালি (esophageal) ও কোলন (colon) ক্যান্সার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ সম্ভব হবে।
এই গবেষক মো. জসিম উদ্দিনের জন্ম নোয়াখালীর বাটইয়া গ্রামে। তিনি হাজি মো. হানিফ উদ্দীন এবং বেগম সাফিয়া খাতুনের প্রথম সন্তান। তিনি শৈশব ও বেড়ে ওঠেন ঢাকার জিগাতলায়। ঢাকার রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ হতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমেদের নিকটে তাঁর গবেষণার হাতেখড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক প্ল্যান্টে। এরপর ১৯৯৭ সালে জাপান সরকারের মনবুসো (Monbusho) বৃত্তি নিয়ে চলে যান জাপানের শিনসু বিশ্ববিদ্যালয়ে (Shinshu University)।